ভর্তির দাবিতে আমরণ অনশনের তৃতীয় দিনে অসুস্থ ২ শিক্ষার্থী

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির দাবিতে আমরণ অনশনে ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষমান তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায়প্রথম আলো

গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন আট শিক্ষার্থী। টানা তৃতীয় দিনের অনশন কর্মসূচিতে আজ বৃহস্পতিবার ভর্তি পরীক্ষার অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আগামী রোববার (১ নভেম্বর) এক জরুরি সভা ডেকেছে। অনশন কর্মসূচি পালনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না।

বশেমুরবিপ্রবিতে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফাঁকা আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তির দাবিতে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) থেকে এই আমরণ অনশন শুরু হয়। শুরুতে এ, বি, ই, এফ ও এইচ ইউনিটের আট শিক্ষার্থী এই অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। পরে পারিবারিক সমস্যার কারণে আকিব ও নাঈম নামের দুই অনশনকারী শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরে যান। গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনে নতুন করে আরও দুজন কর্মসূচিতে যোগ দেন। এ নিয়ে অনশনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা আটেই স্থির রয়েছে। নতুন দুজন হলেন ই ইউনিটে ১২৮০ সিরিয়ালে অপেক্ষমাণ তালিকা গোপালগঞ্জের সৌরভ শীল ও একই ইউনিটের ১৪৮২ সিরিয়ালে থাকা কোটালিপাড়ার নোমান হাওলাদার।

বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতিপূর্বে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাঁরা বলেছিলেন, পরবর্তী সময়ে ভর্তি নেওয়া হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটা হয়নি। পরবর্তী সময়ে আমরা নতুন উপাচার্য যোগদানের পর তাঁকে চিঠি দিই। কিন্তু তিনিও কোনো পদক্ষেপ নেননি।
সৌরভ শীল, অনশনকারী শিক্ষার্থী

সৌরভ শীল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি বিভাগে আসন ফাঁকা রয়েছে। এসব আসন কেন ফাঁকা থাকবে, তা আমাদের জানা নেই। আমাদের অনশন কর্মসূচির তৃতীয় দিন চলছে। এরই মধ্যে দিনাজপুরের দীপক চন্দ্র দাস ও ঠাকুরগাঁও থেকে আসা মো. মিলন আলী নামের দুজন সহযোদ্ধা শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে আসা মাহফুজুর হক ও মানিকগঞ্জের আল-মামুন নামের আরও দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁরা দুজন অবশ্য এখানেই আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব স্যার মুঠোফোনে অনশন বন্ধ করে রোববার দেখা করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু আমরা ভর্তির নিশ্চয়তা না পাওয়ায় উপাচার্যের প্রস্তাবে সম্মত হইনি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাব।’

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতিপূর্বে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাঁরা বলেছিলেন, পরবর্তী সময়ে ভর্তি নেওয়া হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটা হয়নি। পরবর্তী সময়ে আমরা নতুন উপাচার্য যোগদানের পর তাঁকে চিঠি দিই। কিন্তু তিনিও কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ কারণে আমরা ভর্তির দাবিতে আমরণ অনশন করছি।’

অনশন কর্মসূচি পালনকারী শিক্ষার্থীদের আমি বলেছি, তোমরা অনশন থেকে সরে দাঁড়াও। ১ নভেম্বর এসো, স্মারকলিপি দাও। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করি। অথচ তারা আমার কথা রাখল না।
এ কিউ এম মাহবুব, উপাচার্য, বশেমুরবিপ্রবি

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার ধর বলেন, অনশন কর্মসূচি পালনকারী দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁরা মূলত না খেয়ে থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এখন অনেকটা সুস্থ আছেন।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির প্রধান অধ্যাপক এম এ সাত্তার বলেন, ‘আমরা মেধাতালিকা থেকে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়ার পরও তিনবার অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থীদের ডেকেছি। এমনকি তৃতীয়বারে শিক্ষার্থীদের বাড়িতেও ফোন দিয়েছি। কিন্তু এরপরও আসন ফাঁকা ছিল। যেহেতু তিনবার ওয়েটিং তালিকা থেকে শিক্ষার্থীদের ডাকার পরও সিট ফাঁকা ছিল এবং আমাদের শিক্ষকসংকট, কক্ষসংকটসহ বিভিন্ন সংকট ছিল। তাই ভর্তি পরীক্ষার কোর কমিটি মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়, আর কোনো শিক্ষার্থীকে ডাকা হবে না।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেহেতু কাউকে ডাকিনি, তার অর্থ, আমরা আর কাউকে ভর্তি নেব না। এ ক্ষেত্রে পৃথকভাবে ভর্তি বন্ধের নোটিশ দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর বিষয়টি নিয়ে আমাদের যেসব শিক্ষার্থী-অভিভাবক ফোন করেছিলেন, তাঁদেরও জানিয়ে দিয়েছি, আর কাউকে ভর্তি নেওয়া হবে না।’

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছি কিছুদিন হলো। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা আছে, এটা সত্য। তখন কী হয়েছিল, তা আমার জানা নেই। আমরা এ বিষয়ে রোববার জরুরি সভা আহ্বান করেছি। অনশন কর্মসূচি পালনকারী শিক্ষার্থীদের আমি বলেছি, তোমরা অনশন থেকে সরে দাঁড়াও। ১ নভেম্বর এসো, স্মারকলিপি দাও। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করি। অথচ তারা আমার কথা রাখল না।’