‘ভাই লাশ হয়ে গেল, আমাদের ঈদ শেষ’

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে মাইক্রোবাস ডুবে নিখোঁজ চালক মারুফ হোসেনের লাশ দেখে স্বজনের আহাজারিএম রাশেদুল হক

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে মাইক্রোবাস ডুবে নিখোঁজ চালক মারুফ হোসেনের (৪৫) লাশ দেখে আহাজারি শুরু করেন তাঁর স্বজনেরা। বারবার তাঁরা বলতে থাকেন, দিন পার হলে ঈদ। সেই ঈদ আনন্দের বদলে গভীর কষ্ট নিয়ে এল তাঁদের পরিবারের জন্য।

নিহত মারুফের বড় ভাই ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা দুই দিন ধরে ঘাটেই বসে থেকে ভাইয়ের অপেক্ষা করছিলাম। রক্তের ভাই, কী করে ভুলব তোকে! রাত পোহালে ঈদ। আমাদের এখন কিসের ঈদ, কিসের আনন্দ? ভাই লাশ হয়ে গেল। আমাদের ঈদ মাটি হয়ে গেল। আমাদের ঈদ শেষ।’ তিনি জানালেন, মারুফের স্ত্রী ও তিন মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার ঝড়ে তার ছিঁড়ে পন্টুনসহ ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় থাকা মাইক্রোবাস নদীতে চলে যায়। ৪৫ ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে নিখোঁজ চালক মারুফের লাশ উদ্ধার করা হয়। ভাইয়ের লাশের জন্য ফেরিঘাটে দুই দিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন দুই ভাইসহ স্বজনেরা।

আজ সকাল আটটার দিকে ফেরি ঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভাটিতে বাহির চর সাত্তার মেম্বারপাড়ায় লাশ ভেসে ওঠার খবর পেয়ে ছুটে যান মারুফের বড় ভাই ফারুক হোসেন, ছোট ভাই শাহিন হোসেন ও শ্যালক মো. খোকন। লাশের পরনের শার্ট-প্যান্ট ও চেহারা দেখে তাঁরা শনাক্ত করেন, এটি নিখোঁজ মারুফ হোসেনের লাশ। এ সময় তাঁর পকেটে মাইক্রোবাসের চাবিও পাওয়া যায়।

বড় ভাই ফারুক হোসেন বলেন, গ্রামের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে হলেও সবাই ঢাকায় বড় হয়েছেন। ঢাকাতেই চাকরি-ব্যবসা করেন। তিনি ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশটি দ্রুত ঢাকায় নিয়ে দাফন করার আকুতি জানান তিনি।

পদ্মায় নিখোঁজ চালক মারুফ হোসেনের লাশ আজ বৃহস্পতিবার ৪৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়
প্রথম আলো

লাশের পাশে বসে মুঠোফোনে স্বজনদের খবর দিচ্ছিলেন আর আহাজারি করছিলেন মারুফের ছোট ভাই শাহিন হোসেন। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, ‘দুর্ঘটনার দিন মাইক্রোবাসটি যখন টেনে তোলা হলো, তখন পেছনের ডালা খোলা ছিল। যদি গাড়ির ভেতর লাশ থাকে, তাহলে ওই স্থানেই পড়ে ছিল। তখন ফায়ার সার্ভিসের দল বা উদ্ধারকারী দল খোঁজ করতে থাকলে অবশ্যই লাশটি পেত। কিন্তু মাইক্রোবাসটি উপড়ে টেনে তোলার পর থেকে চালকের কেউ সন্ধান করেনি। প্রশাসনের লোকজনেরও তেমন কোনো তৎপরতা দেখিনি।’

আরও পড়ুন