ভাঙন ঠেকাতে টেকসই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

দুই বছর আগেও ভাঙন প্রতিরোধে এ ধরনের জিও টিউব বসানো হয়েছিল। কিছুদিন পরই টিউব নষ্ট হয়ে যায় এবং ভাঙন শুরু হয়

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে জিও টিউব স্থাপন করা হচ্ছে। গত ২৮ এপ্রিলের ছবিপ্রথম আলো

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে সৈকতে দেড় কিলোমিটারে বসানো হচ্ছে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ। আগামী জুনে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।

তবে সৈকতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুই বছর আগেও ভাঙন প্রতিরোধে এ ধরনের জিও টিউব বসানো হয়েছিল। কিছুদিন পরই টিউব নষ্ট হয়ে যায় এবং ভাঙন শুরু হয়। তাঁরা সৈকত রক্ষায় টেকসই পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। এদিকে সৈকতে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করে পাইপের মাধ্যমে সরাসরি জিও টিউবে ভর্তি করা হচ্ছে। এতে সৈকত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ভাঙন রক্ষায় সৈকতের ৩৭০ মিটারের জিও টিউব বসানোর কাজ শেষ করেছিল পাউবো। এতে ব্যয় হয়েছিল ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এতে ভাঙন কিছুদিন বন্ধ ছিল। এরপর জিও টিউব নষ্ট হয়ে গেছে। জিও টিউবের ওপর দিয়ে দর্শনার্থীরা চলাচল করায় সেটি ছিদ্র হয়ে যায়। পরে টিউবের ভেতরের বালু সরে যায়। এরপর আবার সৈকতে ভাঙন দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে সৈকতের ভাঙন ঠেকাতে আবারও জিও টিউব ও জিও ব্যাগ বসানোর কাজ করছে পাউবো।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ‘সতর্কতামূলক প্রতিরক্ষা কাজ’ নামের এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে গত জানুয়ারিতে, শেষ হবে জুনে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিজেজিটিএল এবং একেএ নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় কুয়াকাটা সৈকতে ১ হাজার ৫০০ মিটার জিও টিউব বসানো হবে। এই জিও টিউবের মধ্যে ভাঙনের ঝুঁকি স্থানে বসানো হবে ৫০০ মিটার ওভেন টিউব (উন্নত মানের টেকসই) এবং এক হাজার মিটার বসানো হবে নন ওভেন টিউব (সাধারণ মানের টেকসই)। এ ছাড়া জিও টিউবের সামনে সাগরের দিকে বসানো হবে ৩৭ হাজার জিও ব্যাগ, যা সাগরের ঢেউয়ের আঘাত থেকে জিও টিউবকে রক্ষা করবে।

গত ২৮ এপ্রিল গিয়ে দেখা যায়, কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্টে জিও টিউব বসানোর কাজ চলছে। দক্ষিণ পাশে সাগরের খুব কাছে সৈকতে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করে পাইপের মাধ্যমে সরাসরি জিও টিউবে ভর্তি করা হচ্ছে। জিরো পয়েন্টের পূর্ব দিকে শ্রমিকেরা ‘কোদাল’ দিয়ে কুপিয়ে বালু তুলে জিউ ব্যাগ ভর্তি করছেন। এ সম্পর্কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি স্বপন মৃধা বলেন, পাউবোর নির্দেশনা অনুযায়ী জিও টিউব স্থাপন ও বালু ভর্তির কাজ করা হচ্ছে। এখানকার বালু দিয়ে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে।

সৈকত থেকে বালু তুলে কাজ করার কারণে সৈকত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মোতালেব শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেও সৈকতের ভাঙন ঠেকাতে জিও টিউব বসানো হয়েছিল। তখন অন্য স্থান থেকে বালু এনে টিউবে ভর্তি করা হয়েছিল। সৈকত থেকে বালু কেটে কিংবা খননযন্ত্র দিয়ে উত্তোলন করলে সৌন্দর্য নষ্ট হবে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, এর আগেও ভাঙন রোধে সতর্কতামূলক প্রতিরক্ষাকাজ করা হয়েছিল। জিও টিউব ও জিও ব্যাগ বসানো হয়েছিল কিন্তু টেকেনি। কুয়াকাটা এখন যেভাবে ভাঙছে, তাতে এলাকার লোকজনসহ বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ভাঙন রোধে টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করা প্রকল্প হাতে নেওয়া জরুরি।

পাউবো কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল রহমান মুঠোফোনে বলেন, সৈকত থেকে বালু উত্তোলন করলেও তা জোয়ারের সময় আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। জিও টিউবের যাতে ক্ষতি না হয়, সে জন্য ঠিকাদারকে জিও টিউবের ১০০ মিটার দূর থেকে বালু উত্তোলন করতে বলা হয়েছে। এতে সৈকতের কোনো ক্ষতি হবে না।

রাশেদুল রহমান আরও বলেন, আপাতত কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী অংশে জরুরি ভাঙন রোধে প্রতিরক্ষার কাজ করা হচ্ছে। সৈকতের স্থায়ী সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে।