ভাঙনে বিস্তীর্ণ এলাকার জমি বিলীন

একের পর এক ভাঙছেই ফসলি জমি। সম্প্রতি শেরপুরের চুনিয়ারচর গ্রামে।
ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভয়াবহ ভাঙনে চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের চুনিয়ারচর গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি নদগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মসজিদসহ শতাধিক ঘরবাড়ি। দুর্গম চরাঞ্চলের এসব মানুষ ফসলি জমি হারিয়ে চরম সংকটে আছে। ভাঙনরোধে সরকারি পর্যায়ে কোনো উদ্যোগ নেই।

সম্প্রতি সরেজমিন এলাকায় গিয়ে ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র চোখে পড়ে। এ সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদের স্রোত শেরপুরের কুলুরচর ব্যাপারীপাড়া, ভাগলগড়সহ আশপাশের গ্রামগুলোতে সরাসরি আঘাত হানছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয়। এতে তিন সপ্তাহ ধরে চুনিয়ারচর গ্রামে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গ্রামের এক কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি নদগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে ভাঙনের স্থান থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরে রয়েছে চরপক্ষীমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মসজিদ ও শতাধিক ঘরবাড়ি। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এসব স্থাপনাও নদগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

চুনিয়ারচর গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, ভাঙনে তাঁর ৭ একর জমির পাট ও সবজি নদে বিলীন হয়ে গেছে। এতে তাঁর ২ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। কীভাবে সামনের দিনগুলো চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

কৃষক ইসমত আলীর তিন একর ফসলি জমি নদগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা যেটুকু আছে, সেটুকুও নদের ভাঙনের হুমকির মুখে। বাড়িভিটা বিলীন হলে অন্য কোথাও চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না ইসমত আলীর। আরেক কৃষক মোহাদুল ইসলাম নিজের অবস্থা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আগেই তাঁর তিন একর জমি নদে বিলীন হয়েছে। পরে এক একর জমি বন্ধক রাখেন। সেই জমিও নদগর্ভে চলে যাওয়ার পথে।

ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বলছেন, নদের ভাঙন অব্যাহত থাকায় তাঁদের হাজার হাজার একর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। কিন্তু ভাঙনরোধে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। এভাবে নদ ভাঙতে থাকলে একসময় গ্রামে কোনো আবাদি জমি থাকবে না। তাই কৃষকদের বাঁচানোর জন্য ভাঙনরোধে এখানে শক্ত একটা বাঁধ দেওয়ার আবেদন গ্রামবাসীর।

জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ইতিমধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্থানীয় সাংসদকে অবহিত করেছেন তিনি।

পাউবো জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, চুনিয়ারচর গ্রামে ভাঙনের বিষয়টি তাঁরা পর্যবেক্ষণ করছেন। ভাঙনরোধে পাউবোর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।