ভাঙ্গায় ইতালিপ্রবাসীকে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতার নামে মামলা

হত্যা
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক ইতালিপ্রবাসীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ওই প্রবাসীর নাম মাসুদ রানা (৪৯)। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নিহতের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় হত্যা মামলাটি করেন।

এ মামলায় ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এমদাদুল হক বাচ্চুসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা পাঁচ-সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা এমদাদুল হক পলাতক।

গত মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে ভাঙ্গা পৌরসভার নওপাড়া বাসস্ট্যান্ডে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত মাসুদ রানা ভাঙ্গা পৌরসভার গজারিয়া মহল্লার হারুন অর রশিদের ছেলে।

পৌরসভা নির্বাচনে মাসুদ রানা ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভাঙ্গা সহকারী জজ আদালত আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল হক মিঠুনের পক্ষে কাজ করছিলেন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এমদাদুল হক বাচ্চুসহ তাঁর লোকজন প্রবাসী মাসুদ রানার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাসুদ রানা বিবাহিত এবং দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সপরিবার ইতালিতে বসবাস করেন। ভাঙ্গা পৌর নির্বাচন উপলক্ষে প্রায় তিন মাস আগে তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন। ১১ এপ্রিল এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে এ নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ২০ এপ্রিল ইতালি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল মাসুদ রানার।

এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, ভাঙ্গা পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন গজারিয়া গ্রামের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর এক পক্ষকে নেতৃত্ব দেন ভাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এমদাদুল হক বাচ্চু এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাজ্জাক ফকির। দুই পক্ষের বিরোধের কারণে গত বছর বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে জখম, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি গজারিয়া গ্রামের জয়নাল শেখকে (৩৫) গতকাল বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই)

এলাকাবাসী আরও জানান, পৌরসভা নির্বাচনে মাসুদ রানা ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভাঙ্গা সহকারী জজ আদালত আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল হক মিঠুনের পক্ষে কাজ করছিলেন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এমদাদুল হক বাচ্চুসহ তাঁর লোকজন প্রবাসী মাসুদ রানার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে মাসুদ রানা ভাঙ্গা পৌরসভার নওপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নান্নু শেখের চায়ের দোকানে বেঞ্চে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় ২০-২৫ জন লোক এসে তাঁকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মাসুদ রানা দৌড়ে পাশে আনোয়ার মাতুব্বরের মুদিদোকানে প্রবেশ করলে হামলাকারীরা ওই দোকানের ভেতরে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেন তাঁকে। পরে এলাকাবাসী রক্তাক্ত অবস্থায় মাসুদ রানাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে রাত সাড়ে আটটার দিকে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এদিকে মাসুদ রানার মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর গজারিয়া গ্রামে পাঁচ-ছয়টি বাড়িতে হামলা করে ১৪টি গবাদিপশু লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে গজারিয়া গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ জানান, সাবেক কাউন্সিলর এমদাদুল হক বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি গজারিয়া গ্রামের জয়নাল শেখকে (৩৫) গতকাল বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা এমদাদুল হকের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।