ভাঙ্গায় মাদ্রাসা থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে থানায় হামলা, ৬ পুলিশ আহত

ফরিদপুরে ভাঙ্গায় থানার কাছে জামিয়া ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম ঈদগাহ মাদ্রাসা থেকে একটি মিছিল বের দুপুরে থানায় হামলা চালিয়েছেপ্রথম আলো

ফরিদপুরে ভাঙ্গায় আজ শনিবার দুপুরে একদল সংঘবদ্ধ জনতা থানায় হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে থানার ফটক। এ সময় পুলিশের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে পুলিশ ৪৫টি শর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভাঙ্গায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিজিবি, পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাবও মোতায়েন করা হয়েছে।

ফরিদপুরে ভাঙ্গায় থানার কাছে জামিয়া ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম ঈদগাহ মাদ্রাসা থেকে একটি মিছিল বের দুপুরে থানায় হামলা চালিয়েছে। হামলার পর চিত্র
প্রথম আলো

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বেলা সোয়া দুইটার দিকে জোহরের নামাজের পর ভাঙ্গা থানার কাছে জামিয়া ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম ঈদগাহ মাদ্রাসা থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ভাঙ্গা বাজার ঘুরে বিশ্বরোড এলাকায় যায়। পরে বিশ্বরোড থেকে ফিরে মিছিলের জনতা ভাঙ্গা থানার কাছে ঈদগাহ মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হয়। মিছিলকারীরা ওই মাঠ থেকে লাঠি ও কাঠের বাটাম সংগ্রহ করে বেলা সোয়া ২টার দিকে ভাঙ্গা থানায় হামলা করে। ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষ অতর্কিত এ হামলায় অংশ নেয়।

হামলাকারীরা ভাঙ্গা থানার ফটক এবং ভেতরে ঢুকে দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় হামলাকারীরা থানার দিকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটের টুকরা ছুড়তে শুরু করে। এ হামলা ঠেকাতে গিয়ে দুই উপপরিদর্শক (এসআই) ও এক সহকারী উপপরিদর্শকসহ (এএসআই) ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশ ব্যারাক থেকে পুলিশ এসে শর্টগানের ৪৫টি গুলি ছুড়ে ৪০ মিনিট পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় ভাঙ্গা থানার এসআই মো. শহীদুল্লাহ (৪৭) ও আবুল কালাম আজাদ (৩৫), এএসআই আজিজুল রহমান (৩৩) এবং কনস্টেবল জয়নাল আবেদিন (৩৫), শাহ জালাল (২৭) ও মতিউর রহমান (৪৩)। তাঁদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এ খবর শুনে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান ভাঙ্গায় ছুটে যান। তিনি বিকেল পৌনে ৪টার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকদের এ বিষয়ে অবহিত করেন। পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ হামলা পরিকল্পিত। আমরা বিভিন্ন মাদ্রাসায় আগে থেকেই যোগাযোগ করেছিলাম। তারা কথা দিয়েছিল কোনো ঝামেলা করবে না। কিন্তু কথার বরখেলাপ করে অতর্কিতে এ হামলা চালানো হয়েছে।’

ফরিদপুরে ভাঙ্গায় থানার কাছে জামিয়া ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম ঈদগাহ মাদ্রাসা থেকে একটি মিছিল বের দুপুরে থানায় হামলা চালিয়েছে। ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে থানার ফটক। হামলার পর চিত্র
প্রথম আলো

পুলিশ সুপার বলেন, ভাঙ্গা বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির গোপালগঞ্জ সফরের পর ভিআইপিদের ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ঢাকায় ফেরা পণ্ড করার জন্যই এ ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, হেফাজতে ইসলাম ও চরমোনাই পীরের অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাঁদের কোনো নেতা এ ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকার করেননি। তবে যাঁরা এ আন্দোলন সংঘবদ্ধ করেছেন, তাঁদের পরিচয় আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে পুলিশ মামলা করবে। মামলার পর সংঘবদ্ধ হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করতে পারব।’

এদিকে আজ দুপুর থেকে ফরিদপুরে দুই প্লাটুন (৪০ জন) বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি ঝিনাইদহ মহেশপুর ৫৮ ব্যাটালিয়নের নায়েক সুবেদার মো. হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা ফরিদপুরে এসে পৌঁছান। ফরিদপুরে এসেই তাঁরা ভাঙ্গার উদ্দেশে রওনা দেন। ভাঙ্গাসহ স্পর্শকাতর জায়গায় বিজিবির টহল শুরু হয়েছে।

হামলাকারীরা ভাঙ্গা থানার ফটক এবং ভেতরে ঢুকে দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় হামলাকারীরা থানার দিকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটের টুকরা ছুড়তে শুরু করে। হামলার পর চিত্র
প্রথম আলো