ভাতা না পেয়ে শুনীতি রানীর কষ্টের জীবন

নিজের ঘরের সামনে হতদরিদ্র নারী শুনীতি রানী। সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামে
প্রথম আলো

তিনি ওরাওঁ সম্প্রদায়ের এক দরিদ্র নারী। স্বামী মারা গেছেন এক যুগ আগে। আগে মানুষের বাড়িতে কাজ করে খেতেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় আগের মতো কাজ করতে পারেন না। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। ১০ বছর আগেই তাঁর বয়স্ক ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু আজও তিনি বয়স্ক ও বিধবা—কোনো ভাতাই পাননি। ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।

ওই নারীর নাম শুনীতি রানী (৬৩)। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ভবানীগঞ্জ গ্রামে। শুনীতি উপজেলার একমাত্র ওরাওঁ সম্প্রদায়ের বৃদ্ধা।
স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ভবানীগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পেছনে একটি খুপরিতে বাস করছেন সুনীতি। হাটবাজার ঝাড়ু দিয়ে ও মাছের আড়তে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে কোনোরকম দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

সরকারি নিয়মানুসারে বয়স্ক ভাতার জন্য পুরুষদের ৬৫ ও নারীদের ৬২ বছর বয়স বাধ্যতামূলক। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ৫০ বছর বয়সে বয়স্ক ভাতার সুবিধার আওতায় আসবেন। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে শুনীতি রানীর বয়স ৬৩ বছর। তাঁর জন্ম ১৯৫৭ সালের ১৫ আগস্ট। এরপরও তিনি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত হতে পারেননি। অথচ তিনি নিয়মিত স্থানীয় ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়ে আসছেন।

গতকাল সোমবার শুনীতি রানীর ঘরের দরজার সামনে গেলেই তিনি লাঠিতে ভর করে সামনে আসেন। কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আর পারছি না বাবু। সরকার বাহাদুরের কোনো ভাতাই পাই না, কীভাবে চলি।’ অনেকবার উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ভাতার জন্য ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে গেলেও তাঁকে তালিকাভুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি জানান, আগে শরীর ভালো থাকার কারণে কাজ করে চলতে পারলেও এখন আর পারেন না তিনি। মাঝেমধ্যে এক মেয়ের বাড়িতে গিয়ে থাকেন তিনি।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন নিয়ে কাজ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার পরিচালক কলেজশিক্ষক সমরেশ কুমার প্রথম আলোকে বলেন, শুনীতি রানী উপজেলায় একমাত্র বয়স্ক ওরাওঁ সম্প্রদায়ের নারী। এ সম্প্রদায়ের কেউ ভাতা পান না। তাঁর ভাতার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিয়মিত তাঁকে (শুনীতি রানী) সহযোগিতা করে থাকেন বলে জানিয়েছেন।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল মমিন শুনীতি রানীর ভাতা না পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, যখন যাচাই-বাছাই হয়, তখন হয়তো তিনি (শুনীতি রানী) তাঁদের কাছে আসেননি। এ কারণে ভাতার তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। এ সময় শুনীতি রানীর ছবি দেখালে ও দুরবস্থার কথা জানালে তিনি বলেন, এবার তাঁকে ভাতার তালিকাভুক্ত করা হবে।