ভাতার জন্য ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ, অডিও ফাঁস

jhalkathi
jhalkathi

ঝালকাঠি সদর উপজেলার নথুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যের বিরুদ্ধে মাতৃত্বকালীন ভাতা দিতে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এক নারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ওই ইউপি সদস্য হলেন আবুল হোসেন মল্লিক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন নথুল্লাবাদ গ্রামের তাজুল ইসলামের স্ত্রী শাহনাজ বেগম। ঘুষ চাওয়া নিয়ে আবুল হোসেন ও শাহনাজের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগের সঙ্গে সেটি জমা দিয়েছেন শাহনাজ। তবে কণ্ঠস্বরটি তাঁর নয় বলে দাবি করেছেন আবুল হোসেন।

এ বিষয়ে ইউপির চেয়ারম্যান রেজাউল কবির বলেন, ‘অডিও রেকর্ডের কণ্ঠস্বর আবুল হোসেনের বলেই মনে হয়েছে। আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। দোষী হলে ইউনিয়ন পরিষদে রেজল্যুশন করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করব।’

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শাহনাজ বেগম মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আবুল হোসেনের মুঠোফোনে কল করে অনুরোধ করেন। আবুল হোসেন এ জন্য পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ চান। শাহনাজ গত ২৪ সেপ্টেম্বর আবুল হোসেনকে বিকাশ করে চার হাজার টাকা দেন। এরপরও শাহনাজের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়নি। সম্প্রতি শাহনাজ তাঁর অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে সানজিদা আক্তারকেও মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়ার জন্য মুঠোফোনে আবুল হোসেনের মুঠোফোনে কল করে আবার অনুরোধ করেন। এবারও পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ চান আবুল হোসেন।

ফোনালাপে শাহনাজকে আবুল হোসেন বলেন, ‘মেম্বার হইতে ৯ লাখ টাকা লাগে। সরকার টাকা দেবে, আর পাবলিক তা এমনি এমনি নিয়ে যাবে; তা কেমন করে হয়। আপনি আমার মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা নেবেন, আর পাঁচ হাজার টাকা খরচ করবেন না, তা কী করে হয়। মেম্বারি করে লাভ কী। শুধু পাবলিক টাকা নিয়ে যায়, আমরা কিছুই পাই না। তালিকায় (মাতৃত্বকালীন ভাতা) নাম ওঠাতে হলে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। এই টাকা আরও অনেককে দিতে হয়। না হলে ফাইল ধরে না।’

ওই কথোপকথনের অডিও রেকর্ডসহ গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন শাহনাজ। শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আবুল হোসেন আমার কাছ থেকে চার হাজার টাকা নিয়ে নাম তালিকায় ওঠায় নাই। আমার অ্যাকাউন্ট (হিসাব) খোলার জন্য ৫০০ টাকা নিছে, কিন্তু নম্বর দেয় নাই। এখন আবার মেয়ের নাম তালিকায় ওঠানোর জন্য বলেছি, সেখানেও পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ চায়। সরকার টাকা দিচ্ছে, আর মেম্বাররা গিলে খাবে, এটা কেমন কথা।’

ইউপি সদস্য আবুল হোসেন মল্লিক বলেন, ‘আমি কারও সঙ্গে ফোনে এ ধরনের কথা বলিনি। শাহনাজের স্বামীর সঙ্গে আমার লেনদেন রয়েছে। এর জের ধরে তাঁরা আমাকে হেয় করতে চাইছেন।’

স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তদন্তের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের অফিস দুর্নীতিমুক্ত। ইউপি সদস্যের ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি আমি ফেসবুকে দেখেছি। ওই নারীর কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই নারী যদি ভাতা পাওয়ার উপযোগী হন, তাহলে তালিকায় নাম ওঠানো হবে।’