ভাতার টাকা ফেরত পেতে শুধুই কাঁদছেন বৃদ্ধা ফাতেমা

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় ফাতেমা খাতুন (৭৯) নামের এক বিধবা নারীর ভাতার ৯ হাজার টাকা আড়াই মাস আগে পাঠানো হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের ছেলের মুঠোফোন নম্বরে। তখন থেকে ওই বৃদ্ধা টাকা ফেরতের আশায় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়সহ ইউপি সদস্য ও তাঁর ছেলের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও টাকা ফেরত না পেয়ে শুধুই কাঁদছেন।

ফাতেমার বাড়ি উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের খাগড়াবন্দ নয়াপাড়া গ্রামে।

ফাতেমা বলেন, প্রায় দুই বছর আগে তাঁর নামে বিধবা ভাতার কার্ড হয়। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ভাতার টাকা মুঠোফোনে দেওয়ার কথা বলে গত জুনে তাঁর মুঠোফোন নম্বর নেওয়া হয়। কিন্তু টাকা না পাওয়ায় তিনি সমাজসেবা কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাঁর ভাতার ৯ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে ০১৭৩৭৪৭৪৬৬৪ নম্বরে। পরে ওই নারী নিজে খুঁজে বের করেন ওই মুঠোফোন নম্বরটি ব্যবহার করছেন বিষ্ণুপুর ইউপির সদস্য আজিজুল হকের ছেলে রোস্তম মিয়া। রোস্তম ওই ৯ হাজার টাকা মুঠোফোনে পাওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি ওই বৃদ্ধাকে টাকা ফেরত দেননি।

ফাতেমার অভিযোগ, টাকা ফেরত পেতে ওই ইউপি সদস্য ও তাঁর ছেলের কাছে অনেক ধরনা দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁকে রোস্তম আলী বলেছেন টাকা ফেরত নিতে সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে।

ফাতেমা বলেন, ‘বাবা, মুই তো বুড়া মানুষ। সমাজসেবা অফিসোত মুই মোর নেজের নম্বর দিচনু। তাত টাকা না দিয়া অফিস থাকি টাকা পটাইচে মেম্বারের ছইলের মোবাইলোত। সেই মোবাইল নম্বরটা এক অক (একে–ওকে) কইতে কইতে কষ্ট করি খুঁজি পাচু ওটা হামার মেম্বারের বেটার নম্বর। অ্যালা টাকা চাইলে মেম্বারের বেটা কয় তোরা সমাজসেবা অফিসোত যাও। অটে (সমাজসেবা) থাকি কইলে তার পরে টাকা দেমো। ফির সমাজসেবা অফিসোত গেইলে কয় হামার করার কিছু নাই।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফাতেমা বলেন, ‘বুড়া শরীল আর চলে না বাবা। কত আর ঘোরো। মুই কি টাকাটা ফিরি পাবার নও?’

ফাতেমার নাতি সইবুল ইসলাম বলেন, ‘মেম্বারের ছেলে টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু টাকা ফেরত চাইলে রাগ দেখায়। টাকা ফেরত না পেয়ে আমার দাদিমা কখনো কান্নাকাটি করছেন। গত সোমবার সমাজসেবা অফিসে গিয়েও কেঁদেছেন। তবু কারও মন গলেনি।’

বিধবা ভাতার ওই ৯ হাজার টাকা নিজের মুঠোফোন নম্বরে পাওয়ার কথা স্বীকার করে রোস্তম আলী বলেন, ‘ফাতেমার বিধবা ভাতার কার্ডটি আমি নিজে সমাজসেবা অফিসে গিয়ে করে দিয়েছি। সেখানে আমি আমার ফোন নম্বর দিইনি। হঠাৎ আমার নম্বরে টাকা আসার পরে ভাবছিলাম হয়তো ছেলের স্কুলের উপবৃত্তির টাকা এসেছে। যাহোক ফাতেমাকে টাকাটা একটু সময় নিয়ে ফেরত দিতে চেয়েছি। তারপরও তিনি বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছেন।’

এ বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য আজিজুল হকের মুঠোফোনে আজ যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গোলাম ফারুক বলেন, ‘ফাতেমার বিধবা ভাতার টাকা নগদ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ০১৭৩৭৪৭৪৬৬৪ নম্বরে পাঠানো হয়েছে। ভুল করলে নগদ করেছে। এর সমাধান নগদকেই করতে হবে।’

যোগাযোগ করা হলে নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের রংপুর জেলার ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ বাশরুল বলেন, ‘নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে একজনের টাকা অন্যজনের কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সমাজসেবা কার্যালয় থেকে যেভাবে ভাতাভোগীদের ডেটাবেইস করে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে, অটোমেটিক সেই নম্বরে টাকা চলে গেছে। যদি একজনের টাকা অন্যজনের মোবাইল নম্বরে গিয়ে থাকে, তাহলে সমাজসেবা অফিসের ভুলের কারণেই গেছে। এর দায় সমাজসেবা অফিসকেই নিতে হবে।’