ভাতার বদলে নিম্নমানের যন্ত্র

৬০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে ৫০ নারীর ১২ হাজার করে টাকা পাওয়ার কথা। দেওয়া হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার করে।

দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য তিন মাসের আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ শেষে ১২ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা। চেকের মাধ্যমে এই অর্থ পরিশোধের কথা বলা আছে নীতিমালায়। তবে রাজশাহীর বাগমারায় প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ৫০ নারীকে সাড়ে পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।

বাকি সাড়ে ছয় হাজার টাকার পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে একটি করে সেলাই মেশিন ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালকের লেখা বই। এরই মধ্যে সেলাই মেশিনটি নিম্নমানের বলে অভিযোগ তুলেছেন বেশ কয়েকজন। এর দাম সর্বোচ্চ চার থেকে সাড়ে চার হাজার হলেও মাস্টাররোলের কাগজে ছয় হাজার টাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর বইয়ের দাম ২৩০ হলেও কাটা হয়েছে ৫০০ টাকা করে।

কয়েকজন নারীর অভিযোগ, কৌশলে ভাতার টাকায় ভাগ বসাতে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নীতিমালা ভেঙে এমনটা করেছেন। তবে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা খোন্দকার মাক্বামাম মাহমুদা বলেছেন, নারীদের সুবিধার জন্য প্রশিক্ষণের ভাতার পুরো টাকা না দিয়ে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে।

প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের মধ্যে সাতজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নকল ও নিম্নমানের সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এটি দিয়ে কাজ করতে পারছেন না তাঁরা। মেশিনে বাটারফ্লাই কোম্পানির স্টিকার থাকলেও তা আসল নয় বলে তাঁদের অভিযোগ।

ভবানীগঞ্জ পৌরসভা ও মোহনপুর উপজেলার বাটারফ্লাইয়ের তিনজন পরিবেশক এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আসল সেলাই মেশিনের দাম ৬ হাজার টাকা। অনেকে নকল স্টিকার লাগিয়ে কম দামে বিক্রি করেন।

সেলাই মেশিন সরবরাহকারী ভবানীগঞ্জ বাজারের রিনা সুতাঘর অ্যান্ড মেশিন হাউসের পরিচালক রইচ উদ্দিন দাবি করেন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মেশিনগুলো সরবরাহ করা হয়। যে দাম দেওয়ার কথা, তার চেয়ে কম দিয়েছে বলে জানিয়েছেন। কত টাকায় কেনা হয়েছে, সে তথ্য জানাতে চাননি রইচ উদ্দিন।

* ২৩০ টাকার বই দিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০০ টাকা * সেলাই মেশিন সরবরাহকারীকেও কম টাকা পরিশোধ করা হয়েছে

মহিলাবিষয়ক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বিনা মূল্যে তিন মাস মেয়াদে টেইলারিং ও ব্লক-বাটিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। মাসে ২০ দিন করে তিন মাসে মোট ৬০ দিন এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। এ জন্য প্রতিটি ব্যাচে ২৫ জন টেইলারিং এবং ২৫ জন ব্লক-বাটিক বিষয়ে মোট ৫০ জনকে নির্বাচিত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব প্রশিক্ষণার্থী নারীকে দৈনিক যাতায়াত ভাতা হিসেবে ২০০ টাকা করে ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন নারী অভিযোগ করেন, তাঁদের কাছে ২৩০ টাকা দামের ৬৪ পৃষ্ঠার একটি বই বিক্রি করা হয়েছে ৫০০ টাকায়। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রামচন্দ্র দাসের লেখা যদি এই বাংলায় আসো বই কিনতে বাধ্য করা হয়েছে তাঁদের। অনেকে ঠিকমতো পড়তে পারেন না। তাঁদের কাছে বই বিক্রি করা চাপ ছাড়া কিছুই নয়।

এ বিষয়ে প্রকল্পের উপজেলার সদস্যসচিব ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা খোন্দকার মাক্বামাম মাহমুদা বলেন, ইউএনওসহ কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে এটা করা হয়েছে। নকল মেশিন কেনা হয়নি দাবি করে বলেন, তাঁর দপ্তরের প্রশিক্ষক (ব্লক-বাটিক) রবিউল ইসলাম মেশিন কেনা ও বই বিক্রির কাজটি তদারকি করেছেন। এ সময় (৮ সেপ্টেম্বর) নিজ কক্ষে রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের মেশিন কেনা প্রসঙ্গে বলেন, আসল মেশিনের দাম আরও বেশি। তাহলে নকল মেশিন কেনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তখন রবিউল বলেন, আসলটাই কেনা হয়েছে।

সদ্য বিদায়ী ইউএনও শরিফ আহম্মেদ বলেন, প্রশিক্ষিত নারীরা যাতে সেলাই মেশিন কিনে বাড়িতে কাজ করতে পারেন, এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ভাতার কিছু টাকা রেখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সেলাই মেশিন কেনার সঙ্গে পুরোপুরি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় জড়িত।