ভারত থেকে কিশোরটি নাটোরের রেলস্টেশনে এল কীভাবে

১০ এপ্রিল থেকে ১৩ বছর বয়সী তামিম খান বাগাতিপাড়ার লোকমানপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অবস্থান করছে। তার ভাষ্যমতে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মেদিনীপুরে তার বাড়ি। এখানে কীভাবে সে এল, তা সে জানে না। রোববার দুপুরে তোলা
ছবি: মুক্তার হোসেন

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তামিম খান (১৩) নামের এক কিশোর ১০ দিন ধরে অবস্থান করছে। সে হাঁটতে ও কথা বলতে পারে না। কিছু জানতে চাইলে লিখে জবাব দেয়। তার দাবি, ভারতের মেদিনীপুরে তার বাড়ি। ব্যবসায়ী বাবার সঙ্গে কোচবিহারে থেকে পড়ালেখা করত। সম্প্রতি বাবা মারা যাওয়ার পর সে কীভাবে বাংলাদেশে এল, তা জানে না। কারণ, তাকে অচেতন করে রাখা হয়েছিল।

অসহায় ও অসুস্থ এই কিশোরের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় কিছু তরুণ। প্ল্যাটফর্মে থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। এই কদিনেই সে এলাকাবাসীর আপনজন হয়ে গেছে। তাঁদের ধারণা, বাবার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার জন্য সৎমা ও ভাইয়েরা তাকে কৌশলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।

সে জানায়, তার নাম তামিম খান। তার বাবার নাম বিল্লাল খান। তার বাড়ি ভারতের মেদিনীপুরে। বাবা ব্যবসার জন্য কোচবিহারে থাকতেন
ছবি: প্রথম আলো

লোকমানপুরের যেসব তরুণ তামিমের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আশরাফুল আলম অন্যতম। তিনি বলেন, ১০ এপ্রিল সকালে রেলস্টেশনের নিচের রাস্তায় একটি ছেলেকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ছেলেটি হাঁটতে ও কথা বলতে পারছিল না। তবে শুনতে ও বুঝতে পারছিল। পরনের পোশাক দেখে ধনাঢ্য ঘরের সন্তান বলেই তাঁদের ধারণা হয়। স্থানীয় কয়েকজন তরুণ ছেলেটিকে প্ল্যাটফর্মে তুলে এনে গোসল করান। পরে চিকিৎসককে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। তখন সে ইশারা করে লেখার জন্য কাগজ-কলম চায়। সে জানায়, তার নাম তামিম খান। তার বাবার নাম বিল্লাল খান। তার বাড়ি ভারতের মেদিনীপুরে। বাবা ব্যবসার জন্য কোচবিহারে থাকতেন। সেখানে সে মা–বাবার সঙ্গে থাকত। সেখানকার একটা স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করত। হঠাৎ মা মারা যাওয়ার পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎমা ও ভাইয়েরা তাকে নির্যাতন করত। সম্প্রতি তার বাবা মারা গেছেন। এরপর থেকে তার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। তাকে তরল কিছু খাইয়ে অচেতন করা হয়। এরপর সে কীভাবে এ দেশে ঢুকে পড়ে এবং লোকমানপুর রেলস্টেশনে আসে, তা সে বুঝতে পাচ্ছে না।

সে হাঁটতে ও কথা বলতে পারে না। কিছু জানতে চাইলে লিখে জবাব দেয়
প্রথম আলো

লোকমানপুরের শারীরিক প্রতিবন্ধী কালু মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘আমি হুইলচেয়ারে চলাফেরা করি। তেমন আর্থিক সংগতি নেই। তবু ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠিক থাকতে পারিনি। আমার জমানো টাকা দিয়ে ওকে একটা হুইলচেয়ার কিনে দিছি। এলাকার ছেলেরা ওকে প্ল্যাটফর্মে থাকার ব্যবস্থা করে দিছে। বিছানা, মশারি কিনে দিছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা পালা করে তার খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। তবে উন্নত চিকিৎসা করা হলে ছেলেটি এখনো কথা বলতে ও হাঁটতে পারবে বলে মনে হচ্ছে।’

তামিম খান বলে, দেশে গেলে তাকে মেরে ফেলা হবে। তাই সে এখানকার মানুষের সহযোগিতায় বেঁচে থাকতে চায়
ছবি: প্রথম আলো

নিজ দেশে ফিরতে চায় কি না জানতে চাইলে তামিম খান বলে, দেশে গেলে তাকে মেরে ফেলা হবে। তাই সে এখানকার মানুষের সহযোগিতায় বেঁচে থাকতে চায়। তার দাবি, সে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। তাকে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানোর ফলে কথা বলার ও হাঁটার শক্তি পাচ্ছে না। চিকিৎসা পেলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।

বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, স্থানীয় লোকজনের কাছে তামিমের বিষয়ে জেনেছেন। বিষয়টি তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছেন।