ভারতফেরত করোনা রোগীরাও একই ওয়ার্ডে

করোনাভাইরাস প্রতীকী ছবি।

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের রেড জোনে ২৬ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ১৬ জনই সম্প্রতি ভারত থেকে ফিরেছেন। ভারতে করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ আছে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আরিফ আহম্মেদ আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের রেড জোনে এই মুহূর্তে ২৬ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ভারতফেরত ১৬ জন। এ ছাড়া ভারত থেকে আসা অপর একজন করোনা রোগী বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে হাসপাতালের পথে রয়েছেন। ভারত থেকে আসা এই করোনা রোগীদেরও স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমিত ১০ করোনা রোগীর সঙ্গে একই ওয়ার্ডে রেখে একইভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।


হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে করোনায় সংক্রমিত সাতজন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে দেশে আসেন। এসব করোনা রোগীর মধ্যে ১৮ এপ্রিল ১ জন, ২৩ এপ্রিল ৫ জন ও ২৪ এপ্রিল ১ জন আসেন। তাঁদের জরুরি বিভাগ থেকে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। তাঁরা ওয়ার্ডে না গিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। গত রোববার বিষয়টি জানাজানি হয়। ভারতে করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। ফলে রোগী পালানোর ওই ঘটনায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে তাঁদের ফিরিয়ে এনে হাসপাতালের রেড জোনে ভর্তি করা হয়। এরপর ভারত থেকে আসা আরেকজনের করোনা শনাক্ত হয়। পরে ভারত থেকে আসা আরও আটজনের করোনা শনাক্ত হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিন্ন দুটি পরীক্ষাগারে করোনার ভারতীয় ধরনের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। পরে এ বিষয়ে প্রাপ্ত ফল জানানো হবে। করোনাভাইরাসের ভারতীয় নতুন ধরন পরীক্ষার জন্য পাঁচ দিনের মতো সময় লাগে। গত মঙ্গলবার আটজনের নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের তৃতীয় তলায় একটি ওয়ার্ডে ওই রেড জোনে ৪০ শয্যা রয়েছে। একটি থেকে অপরটির ব্যবধান দুই-তিন ফুট। এই রেড জোনে করোনায় সংক্রমিত রোগীদের ভর্তি রাখা হয়। আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সেখানে ২৬ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। করোনায় সংক্রমিত ভারতফেরত এবং স্থানীয় রোগীরা একই ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। প্যাকেটে করে প্রতিদিন তিন বেলা তাঁদের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) পরে নার্সরা তাঁদের ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ইনজেকশন দিয়ে আসেন। তাঁদের দেখভালের জন্য সার্বক্ষণিক একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দায়িত্বে রয়েছেন। প্রতিদিন সকালে একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক রোগীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। জরুরি ক্ষেত্রে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুঠোফোনে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ কুমার রায় বলেন, ভারতফেরত আট করোনা রোগীর আলাদা দুটি পরীক্ষাগারে করোনা ও করোনাভাইরাসের ভারতীয় নতুন ধরন পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টার এবং ঢাকার আইইডিসিআরের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ভারত থেকে আসা অপর ৯ জনের পরীক্ষার প্রক্রিয়া কাল রোববার শুরু করা হবে।