ভারতে কারাবন্দী ২৫ বাংলাদেশিকে মুক্তির আদেশ

ভারতের কারাগারে আটক ২৫ বাংলাদেশী মুক্তির আদেশ পাওয়ায় তাঁদের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন এই স্বজনেরা।
প্রথম আলো

ভারতের জেলে বন্দী কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ২৫ বাংলাদেশিকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন দেশটির আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলার বিলাসীপাড়া মহকুমা জুডিশিয়াল আদালত। আজ শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারতীর আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহকারী হাইকমিশনার তানভির রসুল।

ভ্রমণ ভিসা নিয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময় চিলমারীর ২৬ নাগরিক ভারতে বেড়াতে যান। সেখানে তাঁরা আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে কেউ মাছ ধরা, কেউ বিভিন্ন খামারে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন।

বকুল মিয়া। ধুবড়ি জেলে আটক অবস্থায় তিনি মারা যান।

এরই মধ্যে করোনায় ভারতে দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন দিলে গত ২ মে দুটি মিনিবাসে করে আসাম রাজ্যের জোরহাট জেলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের চেংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে ফেরার উদ্যোগ নেন এই ব্যক্তিরা। ফেরার পথে ৩ মে সকালে বাহালপুর এলাকায় ধুবড়ি জেলা পুলিশ তাঁদের আটক করে। পরে ৫ মে তাঁদের বিরুদ্ধে ভিসার শর্ত ভঙ্গের মামলা হয়।

এর মধ্যে গত ১ জুলাই পুলিশ হেফাজতে বকুল মিয়া নামের একজন মারা যান। চার দিন পর মরদেহ ফেরত পায় তাঁর পরিবার।

ছাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে কত কাঁন্দিচোং বাবা। সংবাদ পায়া চোখের পানি আটকা যায় না। এ্যালা কোন দিন আসপে, সেই অপেক্ষায় আছি।
মালঞ্জ বেগম, মুক্তির আদেশ পাওয়া আবদুল হানিফ ও মানিক মিয়ার মা

এদিকে ভারতের জেলে বন্দী বাংলাদেশি নাগরিকদের পরিবার ও রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির নেতা-কর্মীরা তাঁদের মুক্তির দাবিতে কুড়িগ্রাম ও চিলমারীতে একাধিকবার মানববন্ধনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের লিখিত আবেদন জানান।

রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের কমিটির সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান বলেন, ‘চিলমারীর সন্তান ২৫ বাংলাদেশিকে আটকের পর তাঁদের মুক্তির দাবিতে আমরা একাধিকবার মানববন্ধন, জেলা-উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন জানাই। ভারতের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক বামপন্থী নেতা উজ্জ্বল ভৌমিকের সহযোগিতায় রাজশ্রী দাশগুপ্ত ও অসীম দাশগুপ্তকে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।’

ধুবড়ি জেলার বিলাসীপাড়া মহকুমা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জতিরুপা হালৈর আদালত শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ২৫ বাংলাদেশিকে মুক্তি দিয়েছেন।
রাজশ্রী দাশগুপ্ত, বন্দীদের পক্ষের ভারতীয় আইনজীবী
আদালত থেকে তাঁদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। রোববার আদালত বন্ধ। তাই সোমবার তাঁরা জেল থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
তানভির রসুল, সহকারী হাইকমিশনার, গুয়াহাটির বাংলাদেশ হাইকমিশন

এদিকে পরিবারের প্রধানদের মুক্তির সংবাদে পরিবারগুলো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। আটক আবদুল হানিফ ও মানিক মিয়ার মা মালঞ্জ বেগম বলেন, ‘ছাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে কত কাঁন্দিচোং বাবা। সংবাদ পায়া চোখের পানি আটকা যায় না। এ্যালা কোন দিন আসপে, সেই অপেক্ষায় আছি।’

এ প্রসঙ্গে ভারতীয় আইনজীবী রাজশ্রী দাশগুপ্ত মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, ধুবড়ি জেলার বিলাসীপাড়া মহকুমা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জতিরুপা হালৈর আদালত শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ২৫ বাংলাদেশিকে মুক্তি দিয়েছেন।

ভারতীর আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহকারী হাইকমিশনার তানভির রসুল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, আদালত থেকে তাঁদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। রোববার আদালত বন্ধ। তাই সোমবার তাঁরা কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।