ভারী বৃষ্টিপাতে বন্যা আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা

সিলেটের দুটি উপজেলায় অন্তত ১১টি রাস্তা নতুন করে পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

দুই দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আবারও নতুন করে তলিয়ে গেছে সিলেট-গোয়াইনঘাট সড়কের বিভিন্ন স্থান। গতকাল সিলেটের গোয়াইনঘাটের সালুটিকর এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

কয়েক দিন ধরে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দুই জেলার আরও অনেক এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এতে এ দুই জেলায় বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দুই দিনের বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল সিলেটের দুটি উপজেলায় নতুন করে অন্তত ১১টি রাস্তা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার বানভাসি মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝখানে কয়েক দিন বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও দুই দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।

গতকালও কয়েক দফা ভারী বৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অনেক এলাকায় পানি বেড়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকায় পানি সামান্য বেড়েছে। সেখানকার বাসিন্দা খন্দকার মাহমুদ বলেন, গত দুই দিনের বৃষ্টিতে পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় মানুষজনও দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

উপজেলার অধিকাংশ রাস্তাঘাটের পানি নেমে গিয়েছিল জানিয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, গত দুই দিনের বৃষ্টিতে আবারও পানি বাড়ছে। নতুন করে উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রামীণ রাস্তা তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি গ্রামেও পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার পিয়াইন, সারি, গোয়াইন ও ডাউকি নদ–নদীর পানি বেড়েছে। এর প্রভাবে বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। গতকাল সারি-গোয়াইনঘাট সড়কের তিনটি অংশ উপচে পানি প্রবাহিত হয়েছে। অথচ কয়েক দিন আগে এ সড়ক থেকে বন্যার পানি সরে গিয়েছিল।

গতকাল পর্যন্ত জেলার ৪৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৭ হাজার ১৭৬ জন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় বন্যায় ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৩।

সুনামগঞ্জে বুধবার রাতভর ভারী বৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ছিল গতকাল বিকেল চারটা পর্যন্ত। ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামায় সুনামগঞ্জে গতকাল আবারও নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে।

সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল নয়টার দিকে সুনামগঞ্জ শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও দুপুরে ছাতক উপজেলা শহরের কাছে এ নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।

সুনামগঞ্জ শহরের মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা সাজিদুর রহমান বলেন, বন্যার পানি কমায় চার দিন আগে বাড়ি ফিরেছিলেন। গতকাল সকালে আবারও ঘরে পানি ঢুকেছে। পানি আরও বাড়লে আবার ঘর ছাড়তে হবে। শহরের কাজীর পয়েন্ট এলাকার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে দোকান খুলতে এসে দেখি আবারও বন্যার পানি চলে এসেছে। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি কী হয়, এই নিয়ে চিন্তায় আছি।’

পানি বাড়ছে গ্রামাঞ্চলেও। সদর উপজেলার বিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ বলেন, এক রাতেই অন্তত দেড় ফুট পানি বেড়েছে। সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের আন্ধাইরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সাব্বির আকন্দ মুঠোফোনে বলেন, উপজেলার চিলাই, খাসিয়ামারা ও চেলা নদ–নদীতে আবার পানি বেড়েছে। দুই দিন ধরে পাহাড়ি ঢল নামছে। এতে নতুন করে আবারও রাস্তাঘাট প্লাবিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামসুদ্দোহ প্রথম আলোকে বলেন, মাঝখানে জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। এখন যেহেতু আবার বৃষ্টি হচ্ছে, তাই পানি কিছুটা বাড়ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো পূর্বাভাস নেই।

বৃষ্টি হওয়ায় পানি কিছুটা বাড়লেও তা সব এলাকায় নয় বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি থামলে এই পানি আবার নেমে যাবে। সার্বিক পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে।