ভারী যান চলাচলে পিলারে ‘ফাটল’

চার বছর আগে এই র‍্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পিলারে ফাটলের কিছু ছবি সোমবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এম এ মান্নান উড়ালসড়কের একটি পিলারে ‘ফাটল’ দেখা দিয়েছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে ওই অংশে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায়
ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটে এম এ মান্নান উড়ালসড়কের কালুরঘাটমুখী র‍্যাম্পের পিলারে ফাটলের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ওই অংশে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় র‍্যাম্পের ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় নগরের চান্দগাঁও থানার পুলিশ। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তা বন্ধ রয়েছে। তবে মূল উড়ালসড়ক এবং নিচের সড়কে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

নির্মাণকাজ শেষে চার বছর আগে এই র‍্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। র‍্যাম্পের পিলারের ফাটলের কিছু ছবি সোমবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এতে আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

নির্মাণত্রুটি এবং ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে র‍্যাম্পের পিলারে ফাটল দেখা দিতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, নকশায় ত্রুটি ও ধারণক্ষমতার বেশি ওজনের গাড়ি চলাচলের কারণে এই ফাটল হতে পারে। তবে নির্মাণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দাবি করছে, র‍্যাম্পের পিলারে কোনো ফাটল সৃষ্টি হয়নি। নির্মাণকাজের সময় দেওয়া ফোম সরে গেছে।

উড়ালসড়কের আরাকান সড়কমুখী এই অংশে কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকা, বাস টার্মিনাল, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা অবস্থিত। কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার কারখানাগুলোর পণ্যবাহী যানবাহন এই র‍্যাম্পের ওপর দিয়ে চলাচল করে।

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকার যানজট নিরসনে ১ দশমিক ৩৩ কিলোমিটারের এই উড়ালসড়ক নির্মাণ করে সিডিএ। নির্মাণকাজ চলাকালেই ২০১২ সালের নভেম্বরে উড়ালসড়কের গার্ডার ধসে ১৬ জন নিহত হন। ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর উড়ালসড়ক উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এই উড়ালসড়ক কার্যকর না হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের দাবির মুখে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র‍্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ৩২৬ মিটার দীর্ঘ ও ৬ দশমিক ৭ মিটার প্রশস্তের র‍্যাম্পটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। এটি দিয়ে উভয়মুখী যান চলাচল করে। এটি এখন রক্ষণাবেক্ষণ করছে সিটি করপোরেশন।

ফাটল নিয়ে দুই মত

গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা। মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, উড়ালসড়কে এই ফাটল দেখে তিনি হতবাক। নিশ্চয় নির্মাণত্রুটির কারণে এটি হয়েছে। মেয়রের সঙ্গে থাকা প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামও বলেন, ‘দুটি কারণে ফাটল দেখা দিতে পারে। একটি নকশাজনিত ত্রুটি, অন্যটি নির্মাণত্রুটি। আবার ধারণক্ষমতার চেয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণেও হতে পারে।’

গতকাল সন্ধ্যায় সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, মন্ত্রণালয়ের বৈঠক থাকায় ঢাকায় রয়েছেন। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, এটি ফাটল নয়। পিলারের সঙ্গে র‍্যাম্পের সংযুক্ত হওয়ার জায়গায় ফোম ছিল। সেটি সরে গেছে। নিচ থেকে মনে হচ্ছে ফাটল। বিস্তারিত জানার জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

উড়ালসড়কের এই পিলারে দেখা দিয়েছে ‘ফাটল’
ছবি: প্রথম আলো

অবশ্য প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান সকালে বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে ভারী যানবাহন চলার কারণে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। সকাল ও সন্ধ্যায় দুই ধরনের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সোমবার রাতে নিচ থেকে স্পষ্ট দেখা যায়নি। নকশা ও নির্মাণকাজে কোনো ত্রুটি নেই বলে দাবি করেন প্রকল্প পরিচালক।

গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, র‍্যাম্পে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় নিচের অংশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। কিন্তু গাড়ির চাপে সেখানে যানজট সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে প্রচুর উৎসুক মানুষ ভিড় করেন। সেখানে কোনো ধরনের নিরাপত্তাবেষ্টনীও দেওয়া হয়নি।

উড়ালসড়ক নিয়ে এ জটিলতার জন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের নকশাগত ত্রুটিকে দায়ী করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই র‍্যাম্প মূল নকশায় ছিল না। হলেও একমুখী হওয়া দরকার ছিল। তার ওপর এই র‍্যাম্প দিয়ে উভয়মুখী ভারী গাড়ি চলাচল করায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।