ভালোবাসায় পোষ মেনেছে শিয়ালের দল

কুষ্টিয়ার শাহাবউদ্দীন মিলন নাম ধরে ডাকলে শিয়ালের দল এসে খাবার খেয়ে যায়প্রথম আলো

শিয়ালের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হিংস্র আর ধূর্ত প্রাণীর ছবি। এমন প্রাণীর সঙ্গে কেউ সখ্যর কথা ভুলেও ভাবতে চান না। ব্যতিক্রম হলেন কুষ্টিয়ার শাহাবউদ্দীন মিলন। একটি–দুটি নয়, ২৩টি শিয়ালের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছে তাঁর। ভালোবাসা দিয়ে শিয়ালের হিংস্রতাকে জয় করেছেন তিনি।

কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মিলন। সম্প্রতি তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, নাম ধরে শিয়ালদের ডাকছেন মিলন। শিয়ালগুলো একে একে এসে মিলনের হাতে থাকা পাউরুটি আর কেক লাফিয়ে লাফিয়ে খাচ্ছে। শিয়ালের সঙ্গে মানুষের সখ্য কীভাবে হলো—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে শিয়ালের সঙ্গে তাঁর এই সখ্য। একদিন একটা বাচ্চা শিয়ালের লেজে আঘাত দেখতে পান তিনি। সেই বাচ্চাটার চিকিৎসা করান। এরপর থেকে বাচ্চাটা বাড়ির সামনে প্রায়ই আসত। ধীরে ধীরে বাচ্চা শিয়ালটার সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। আরও কয়েকটি শিয়াল আসা শুরু করল। প্রতি রাতে বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার সময় পাউরুটি ও কেক নিয়ে আসেন তিনি। শিয়ালদের খাবার দিয়ে তিনি নিজের ঘরে যান।

মিলন জানালেন, এখন ২৩টি শিয়ালের সঙ্গে তাঁর সখ্য। দিনের বেলায় পরিত্যক্ত কিছু বাড়ি ও জঙ্গলের ভেতর অবস্থান করে শিয়ালগুলো। তাদের সবার নাম দিয়েছেন তিনি। সেরো, কাঞ্চি, আহ্লাদী, রাহাজানি, রঘু, জেরিসা, চিন্টু, ভোলভো, ছুটকি, রঙ্গিলা—এমন সব নাম তাদের।

শিয়ালগুলোর তিনটি দল আছে। সেরো একটা দলের নেতৃত্ব দেয়। আরেকটির নেতৃত্ব দেয় রাহাজানি। তৃতীয় দলটির নেতৃত্বে আছে চিন্টু। শিয়ালগুলো কাউকে তাড়া করে না বা কামড়ায় না। বরং মানুষ দেখলে ভয় পায়। এলাকার কুকুরদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে তারা। তাঁর ভাষায়, ‘কোনো প্রাণীই হিংস্র নয়। সাপ, বেজি, ইঁদুরসহ সব প্রাণীর সঙ্গে সখ্য করেছি। তাদের কাছে যেতে পারলে, মন বুঝতে পারলে, সবাইকে আপন করে নেওয়া যায়।’

মিলনের পরিবারে তাঁর মা, স্ত্রী ও তিন মেয়ে আছে। স্ত্রী লাভলী ইয়াসমিন একসময় স্বামীর এই শিয়ালপ্রীতি দেখে খুবই বিরক্ত হতেন। তিনি জানালেন, ‘নোংরা প্রাণী বলে রাগ হতো। তবে একসময় ভালো লেগে যায়। শিয়ালদের জন্য মহব্বত হয়ে গেছে।’

স্থানীয় পাখি ও বন্য প্রাণী পর্যবেক্ষক এস আই সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিলন ভাই যে শিয়ালের সঙ্গে সখ্য গড়েছেন, সেটা আমি দেখেছি। এই শিয়ালের ইংরেজি নাম গোল্ডেন জ্যাকেল। এরা দেশীয় শিয়াল। খুবই ধূর্ত। তবে মানুষ যদি তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে, তবে তারা বন্ধুর মতো আচরণ করে থাকে। বর্তমানে শহর বা গ্রামে জঙ্গল কমে গেছে। এতে শিয়ালসহ বন্য প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে বা লোকালয়ে চলে আসছে। এই শিয়ালগুলোরও তা–ই হয়েছে। এরা এখন কুকুরের সঙ্গে বাধ্য হয়ে মিলেমিশে থাকছে।’