ভাসানচরে ডায়রিয়ায় ১৫ দিনে শিশুসহ পাঁচ রোহিঙ্গার মৃত্যু

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচর
এএফপি ফাইল ছবি

নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা নাগরিকদের মধ্যেও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত ১৫ দিনে সেখানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে চার শিশুসহ পাঁচজন। এ ছাড়া স্থানীয় হাসপাতাল থেকে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন কমপক্ষে দেড় হাজার রোগী। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৩ জন।

ভাসানচরের ২০ শয্যার হাসপাতাল, জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৭ জুন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাসমিন তারা (২০) নামের এক তরুণীর মৃত্যু হয়। ডায়রিয়া ছাড়াও তাঁর রক্তক্ষরণের সমস্যা ছিল। এ ছাড়া আরও তিন শিশু আশ্রয়কেন্দ্রের ঘরে মারা গেছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ নলকূপের পানি পান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন গভীর নলকূপের পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৩৫ হাজার খাবার স্যালাইন ও ৩৩ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ এবং সচেতনতামূলক বৈঠক করা হয়েছে। ভাসানচরে এখন ৩৮টি ক্লাস্টারে (গুচ্ছঘর) ১৮ হাজার ৩৪৭ জন রোহিঙ্গার বসবাস।

ভাসানচর ২০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক রাহাত তানভীর আনোয়ার বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ দিন ধরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ও অন্তর্বিভাগে রোগীর চাপ বাড়তে থাকে। গড়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বয়স ১ বছর থেকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত। প্রায় ৬০০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চরের ২০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

খাবার পানির সমস্যার কারণেই রোহিঙ্গারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।
মাসুম ইফতেখার, সিভিল সার্জন, নোয়াখালী

চিকিৎসক তানভীর আনোয়ার জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৭ জুন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাসমিন তারা (২০) নামের এক তরুণীর মৃত্যু হয়। ডায়রিয়া ছাড়াও তাঁর রক্তক্ষরণের সমস্যা ছিল। এ ছাড়া আরও তিন শিশু আশ্রয়কেন্দ্রের ঘরে মারা গেছে। তবে হাসপাতালে ভর্তি না থাকায় নাম-ঠিকানা তাঁর কাছে নেই।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভাসানচরের ক্যাম্প ইনচার্জ ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আতিকুল মামুন। গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে এখানকার রোহিঙ্গারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছিলেন। প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হয়েছে।

ক্যাম্প ইনচার্জ আতিকুল মামুন জানান, গত কয়েক দিনে ভাসানচরে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ডায়রিয়া, পুষ্টিহীনতাসহ নানা সমস্যা ছিল।

জেলা সিভিল সার্জন চিকিৎসক মাসুম ইফতেখার প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাঁরা সেখানকার খাবার পানির নলকূপের সমস্যা রয়েছে বলে সন্দেহ করে সবগুলো থেকে পানি নেওয়া বন্ধ করে দেন। এরপর গভীর নলকূপের পানি পান করার জন্য সরবরাহ করা হয়। তবে রোহিঙ্গারা রান্নার জন্য সরবরাহ করা পানি খেয়েছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

সিভিল সার্জন বলেন, খাবার পানির সমস্যার কারণেই রোহিঙ্গারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।

২৪ ঘণ্টায় জেলায় আক্রান্ত আরও ৮২ জন

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে আরও ৮২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছে সুবর্ণচর উপজেলায় ২৭ জন। আর সোনাইমুড়ীতে ১০ জন, চাটখিলে ৫ জন, সেনবাগে ৭ জন ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৩ জন।

সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহে জেলায় ডায়রিয়ায় আরও দুজন মারা গেছে। মারা যাওয়া দুজনই সুবর্ণচর উপজেলার বাসিন্দা। আর আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৮৫৪ জন। তবে মৃত ও আক্রান্ত হওয়া এই হিসাবের মধ্যে ভাসানচর অন্তর্ভুক্ত নয়।