ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের দেখে এলেন ১০ কূটনীতিক

ভাসানচরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজে যুক্ত বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেন কূটনীতিকেরা। নোয়াখালী, ৩ এপ্রিল
ছবি: সংগৃহীত

ভাসানচরে রোহিঙ্গারা কেমন আছে আর বঙ্গোপসাগরের নতুন চরটিতে তাদের জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা ঘুরে দেখলেন ঢাকায় কর্মরত ১০ বিদেশি কূটনীতিক। আজ শনিবার সাড়ে চার ঘণ্টার ওই সফরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১০টি দেশ, জোটের রাষ্ট্রদূতেরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় জড়িত সংশ্লিষ্ট সরকারি–বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছেন।
ভাসানচরে বিদেশি কূটনীতিকদের সফরসঙ্গী বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি আলাদা হেলিকপ্টারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিঙ্ক ছাড়াও জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, তুরস্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতেরা ভাসানচরে যান। তাঁদের সফরসঙ্গী ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব মো. মহসিন।

জানতে চাইলে ত্রাণসচিব আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদেশি কূটনীতিকেরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। এর পাশাপাশি তাঁরা সেখানে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজে যুক্ত বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সেখানে কর্মরত অন্যদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। সামগ্রিকভাবে প্রথম সফরের পর তাঁদের মধ্যে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে একধরনের ইতিবাচক মনোভাব দেখতে পেয়েছি।’

ওই সফরে থাকা এক সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাসানচরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর তাঁদের মনোভাব যথেষ্ট ইতিবাচক মনে হয়েছে। বিশেষ করে প্রায় তিন ঘণ্টা সময়ের একটা বড় অংশ তাঁরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তাঁরা জেনেছেন রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় এসেছে। তারা কক্সবাজারের চেয়ে সেখানে নিরাপদ রয়েছে। এ জন্য তারা তাদের আত্মীয়স্বজনকে ভাসানচরে যেতে উৎসাহিত করছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে বাংলাদেশ সরকারের আয়োজনে ১৭–২০ মার্চ পর্যন্ত জাতিসংঘের একটি কারিগরি প্রতিনিধিদল ভাসানচরে যায়। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় কর্মরত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা ভাসানচরে তিন দিনের ওই প্রাথমিক পরিদর্শনে যুক্ত ছিলেন। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলটি ভাসানচরে সরেজমিন সফরের পর সরকারের কাছে আগামী সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ভাসানচর সফরের সময় গতকাল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের ছাপচিত্রের কাজ দেখেন কূটনীতিকেরা। নোয়াখালী, ৩ এপ্রিল
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের রোহিঙ্গাশিবিরে চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেছে। পরিবেশগত ঝুঁকি, সামগ্রিক অবকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের ইচ্ছায় পাঠানো হচ্ছে কি না, এ বিষয়গুলো সামনে এনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুরু থেকেই ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিরোধিতা করে এসেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতার মধ্যেই বাংলাদেশ সরকার গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর শুরু করে।

বিদেশি কূটনীতিকেরা ভাসানচরে যাওয়ার ঠিক এক দিন আগে গত শুক্রবার সেখানে আরও ২ হাজার ১১৯ জন রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে সাত দফায় মোট ১৭ হাজার ৯৭১ জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া হলো।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তার আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।