ভাসানচরে স্বেচ্ছায় যাচ্ছে রোহিঙ্গারা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানালেন নেতারা

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে রোহিঙ্গা নেতাদের (মাঝি) তল্লাশি করা হয়। মঙ্গলবার বেলা দেড়টায়
ছবি: প্রথম আলো

কারও প্ররোচনায় নয়, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় নোয়াখালীর ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে যাচ্ছে। কারণ, কক্সবাজারের তুলনায় ভাসানচরের আশ্রয়শিবির উন্নত-টেকসই, সুযোগ-সুবিধাও অনেক বেশি।

মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-৪–এ (এক্সটেনশনে) ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে রোহিঙ্গা মাঝিদের (নেতা) সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বৈঠকে কয়েক রোহিঙ্গা নেতা ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের বিষয়ে তাঁদের এমন মনোভাব তুলে ধরেন। বৈঠকে অংশ নেন উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবির থেকে ৭০ রোহিঙ্গা নেতা। বক্তব্য দেন ছয়জন। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা থেকে সোয়া এক ঘণ্টা চলে এই বৈঠক।

বৈঠকে ক্যাম্প-৪ ও ২১–এর দুই রোহিঙ্গা মাঝি আবদুল গফুর ও বশির আহমদ বলেন, কক্সবাজারের পাহাড়ে গড়ে ওঠা আশ্রয়শিবিরগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বসতি করছেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বর্ষায় পাহাড়ধসে বসতি বিলীন ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ঝুঁকি এড়াতে শত শত রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

আরও পড়ুন

জালাল আহমদ নামের আরেক রোহিঙ্গা মাঝি ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

রোহিঙ্গা নেতাদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম দিকে ভাসানচরে যেতে কোনো রোহিঙ্গা রাজি ছিল না। দুই দফায় তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাওয়ার পর তাদের ভুল ভেঙেছে, পরিস্থিতি পাল্টেছে। সেখানে তাদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনারাও (রোহিঙ্গারা) সেখানে গেলে সুখে–শান্তিতে থাকতে পারবেন। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গার থাকার সুব্যবস্থা আছে।’
বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের শান্তিশৃঙ্খলা যেকোনো মূল্যে বজায় রাখা হবে। এখানে কোনো চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীর জায়গা হবে না। রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা অপরাধকর্মে জড়িত, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

আইজিপি বলেন, ভাসানচরে যারা যাচ্ছে, তাদের নিরাপত্তার জন্য ভাসানচরে থানাও চালু হয়েছে। এসব খবর জেনেশুনে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গারা দলে দলে ভাসানচরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। দুপুরে ভাসানচরে নেমে কক্সবাজার থেকে স্থানান্তর করা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ও ভাসানচর থানার উদ্বোধন করেন। সেখান থেকে বিকাল সাড়ে চারটায় উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

বিকেল পাঁচটায় ক্যাম্প-৪ (এক্সটেনশনে) ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে ৭০ রোহিঙ্গা মাঝির (নেতা) সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে তিনি সড়কপথে কক্সবাজার শহরে ফিরে আসেন।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে পালিয়ে আসে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।