ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিলেন আরও ৮ শতাধিক রোহিঙ্গা

নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে রওনা হয়েছেন আট শতাধিক রোহিঙ্গা। ছবিটি আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে তোলা
প্রথম আলো

‘চল চল ভাসানচর চল’ স্টিকারযুক্ত বাসে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের নেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম। সেখান থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজে নৌপথে পাঠানো হবে নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়কেন্দ্রে।

আজ রোববার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে আট শতাধিক রোহিঙ্গা নিয়ে ২২টি বাস ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম রওনা দিয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নাগাদ চট্টগ্রামে পৌঁছাবে বাসগুলো। অন্যদিকে আজ বিকেলের দিকে আরও কয়েকটি বাসে হাজারখানেক রোহিঙ্গার চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা আছে।

আগামীকাল সোমবার আরও দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে উখিয়া থেকে চট্টগ্রাম পাঠানো হবে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে ৩ হাজার ৬০০ রোহিঙ্গাকে নৌপথে ভাসানচরে নেওয়ার কথা আছে।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কমান্ডিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম তারিক। তিনি বলেন, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চতুর্থ দফায় (প্রথম অংশে) আজ ২২টি বাসে আট শতাধিক রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামে রওনা হয়েছেন।

সকাল আটটার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, একাধিক বাস ও ট্রাকে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের এনে কলেজ মাঠে জড়ো করা হচ্ছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুর-দ্দৌজা নয়ন প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিনে (আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার) ভাসানচরে পাঠানোর জন্য অন্তত ৩ হাজার ৬০০ রোহিঙ্গাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ জন, ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ১ হাজার ৮০৪ জন, ২৯ জানুয়ারি তৃতীয় দফার (প্রথম অংশে) ১ হাজার ৭৭৮ জন, ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফার (দ্বিতীয় অংশে) ১ হাজার ৪৬৪ জনসহ এ পর্যন্ত ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়েছে ৬ হাজার ৬৮৮ জনকে। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে উদ্ধার করার পর ভাসানচর নিয়ে যায় সরকার।

টেকনাফে শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের দলনেতা (মাঝি) আবুল কালাম বলেন, তাঁরা সবাই স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছেন। যাঁরা আগে ভাসানচরে গেছেন, তাঁদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থার কথা শুনে কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অনেকে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভাসানচরে চলে যাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। শিবিরগুলোয় চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।