ভাসানচরের পথে আরও ১ হাজার ৪৩৭ রোহিঙ্গা

২৬টি বাসে প্রথম দফায় ১ হাজার ৪৩৭ রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। আজ দুপুরে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের আশ্রয়শিবির থেকে আরও ১ হাজার ৪৩৭ রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম রওনা দিয়েছে। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে রোহিঙ্গারা ২৬টি বাসে রওনা দেয়। রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাঈমুল হক প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দ্বিতীয় দফায় আরও দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম পাঠানোর কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে ১২তম ধাপে আজ ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রস্তুতি আছে। এর আগে ১১তম ধাপে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ২০ হাজার ৯৪২ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

আজ সকাল থেকে উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের বাস ও ট্রাকে তুলে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আনা হয়। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। বেলা একটার সময় তাদের দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে বাসে ওঠানো হয়।

উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্প ছেড়ে স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাসানচরের পথে রওনা দিয়েছেন রোহিঙ্গা দিল মোহাম্মদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, উখিয়ায় আশ্রয়শিবিরে খুন–অপহরণ লেগেই আছে। সন্ত্রাসীরা যখন–তখন ভয়ভীতি দেখায়, চাঁদা নেয়। এ কারণে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

রোহিঙ্গা সাইফুল আলম বলেন, বর্ষাকালে উখিয়ার লম্বাশিয়া, জুমছড়ি, মধুরছড়া, বালুখালী আশ্রয়শিবিরে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। আবার ঘনবসতির কারণে আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তাঁরা ভাসানচরে যাচ্ছেন।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, আজ রাতের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের বহনকারী গাড়িগুলো চট্টগ্রামে পৌঁছাবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হবে।

রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাঈমুল হক বলেন, ২৬টি বাসে প্রথম দফায় ১ হাজার ৪৩৭ রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাসের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজনের গাড়ি আছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয় সূত্র জানায়, কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরের চাপ কমাতে অন্তত ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই জায়গায় ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।