ভাসানচরের পথে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদল

ভাসানচরের ফাইল ছবি
এএফপি

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদল আজ শনিবার নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। সেখানে তৈরি করা আবাসন ব্যবস্থা বসবাসের উপযোগী কি না, তা দেখতে যাচ্ছে তারা।

উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাস করে। সেখান থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে বঙ্গোপসাগর ও মেঘনার মোহনায় জেগে ওঠা ভাসানচরে পাঠানো হবে। এর অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে একটি প্রতিনিধিদলকে সেখানে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

আজ ভোর ৫টায় ২ নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতা ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট শরণার্থী শিবির থেকে রওনা দেয়। এর আগে শুক্রবার রাতে বিভিন্ন শিবিরের রোহিঙ্গা নেতারা সেখানে পৌঁছান। সেখান থেকে তাঁরা মাইক্রোবাসে করে চট্টগ্রামে যান। সেখান থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে করে বেলা আড়াইটার দিকে ভাসানচরের দিকে রওনা হওয়ার কথা।

চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে করে বেলা আড়াইটার দিকে ভাসানচরের দিকে রওনা হওয়ার কথা। সব ঠিক থাকলে হয়তো আজ রাতের মধ্যে প্রতিনিধিদলটি ভাসানচর পৌঁছাবে। তারা মঙ্গলবার সেখান থেকে ফিরবেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, সরকারের আশা, রোহিঙ্গা নেতারা ঘুরে এসে বোঝালে শরণার্থীরা ভাসানচর যেতে রাজি হবেন। এ দলের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সহায়তাকারী জাতিসংঘের কোনো সংস্থার প্রতিনিধি বা গণমাধ্যমকর্মী থাকছেন না। তবে আগে থেকে ভাসানচরে আরআরআরসি কার্যালয়ের তিন কর্মকর্তা অবস্থান করছেন।

টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা, শালবাগান ও জাদিমোরা শিবিরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গা নেতারা তিন-চার দিন আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে শরণার্থী শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছান। সেখান থেকে তাঁরা সেনা প্রহরায় মাইক্রোবাসে করে উখিয়া রওনা দেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কুতুপালং ট্রানজিট শরণার্থী শিবিরে পৌঁছানোর পর শুক্রবার রাতে তাঁদের সঙ্গে মাহবুব আলম তালুকদার দেখা করেন। তিনি ভাসানচরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে।

জাদিমোরা শিবিরের মাঝি মো. কালাম হোসেন বলেন, শুক্রবার রওনা দেওয়ার আগে তাঁদের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। আজ ভোরে ২ নারীসহ ৪০ জনের একটি দল ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে হয়তো রাতের মধ্যে তাঁরা সেখানে পৌঁছাবেন।

শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি জাফর আলম বলেন, ‘ভাসানচর যদি বসবাসের উপযুক্ত হয়, তবে অবশ্যই রোহিঙ্গারা সেখানে যাবেন। আমরা দেখে এলে সবাইকে বোঝাতে পারব। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁদের দলটি সেখানে যাচ্ছে।’

পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচরে যাওয়ার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম, শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পুলিশ সুপার

শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-১৬) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচরে যাওয়ার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত জুলাইয়ের শেষ দিকে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের তালিকা তৈরি করা হয়।

জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর রামু-১০ পদাতিক ডিভিশনের মুখপাত্র মেজর ওমর ফারুক বলেন, ভাসানচর দেখতে রোহিঙ্গা নেতাদের আগস্টের শুরুতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আজ ভোরে তাঁদের সড়কপথে চট্টগ্রাম হয়ে জাহাজে করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁরা মঙ্গলবার সেখান থেকে ফিরবেন।

ভাসানচরে বাস করছেন ৩০৭ রোহিঙ্গা

ভাসানচরে আগে থেকেই ৩০৭ রোহিঙ্গা বাস করছেন। শরণার্থী শিবির থেকে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার পর গত মে মাসে তিন দফায় তাঁদের ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার। তাঁদের সাগর ও উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।

ভাসানচরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক কমোডর মামুন বলেন, ‘এখানে ৩০৭ রোহিঙ্গা খুব ভালো আছেন। তাঁরা আরাম করে খাচ্ছেন-ঘুমাচ্ছেন। এখনো তাঁদের বেসামরিক প্রশাসনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আমরাই (নৌবাহিনী) তাঁদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করছি।’

জাতিসংঘসহ শরণার্থীদের মানবিক সেবাদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। বাড়তি টাকা বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা, আনুষঙ্গিক সুবিধা বাড়ানোসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণে খরচ হবে।