ভিক্ষার টাকায় জমি কিনে বসবাস, বিক্রেতার দাবি দখল করা হয়েছে

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. মানিক মিয়া। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে
প্রথম আলো

ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. মানিক মিয়া। সেখান থেকে জমানো টাকায় বাড়ি করে থাকবেন বলে কিনেছিলেন সাড়ে ছয় শতক জমি। সেই জমি প্রথমে দখল নিতে পারেননি। জমি বিক্রেতা আবু বক্কর সিদ্দিক বিক্রির কথা অস্বীকার করেন এবং জমি বিক্রির দলিল ভুয়া বলে দাবি করেন। পরে মামলা করে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় জমির দখল নিয়ে সেখানে ঘর তোলেন মানিক মিয়া। এখন সেখান থেকে প্রতিনিয়ত উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে আবু বক্কর সিদ্দিক ও তাঁর পরিবার।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের ঘটনা এটি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানিক মিয়া আজ মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন।

মানিক তাঁর কেনা জমিটির দখল চাইলে বিক্রেতা আবু বক্কর সিদ্দিক আরও টাকা দাবি করেন। মানিক টাকা কেন দেবেন প্রশ্ন তুলে জমির দখল চাইলে গত ১৪ ডিসেম্বর লোকজন নিয়ে তাঁকে মারধর করে জখম করেন আবু বক্কর ও তাঁর লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ভিক্ষাবৃত্তি ও মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে মানিক মিয়া কয়েক বছর আগে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সাড়ে ছয় শতক জমি কেনেন। জমিটি তাঁর নামে লিখে দেন বিক্রেতা একই গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক। কেনার পর ওই সময় ঘর করার মতো টাকা না থাকায় জমিটি আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছে থাকে। আবু বক্কর ওই জমিতে চাষাবাদ করতেন। সম্প্রতি মানিক জমিটির দখল চাইলে আবু বক্কর সিদ্দিক আরও টাকা দাবি করেন। মানিক টাকা কেন দেবেন প্রশ্ন তুলে জমির দখল চাইলে গত ১৪ ডিসেম্বর লোকজন নিয়ে তাঁকে মারধর করে জখম করেন আবু বক্কর ও তাঁর লোকজন। এ ঘটনায় মানিক মুক্তাগাছা থানায় মামলা করেন। পুলিশ এ মামলায় আবু বক্কর সিদ্দিকসহ চারজনকে ১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে। পরে স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় মানিক ওই জমিতে একটি ঘর তোলেন। সেখানে মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন পর আবু বক্করসহ আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে এসে আবার মানিককে জমি থেকে উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছেন। এসব হুমকির কারণে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।

এর আগে ১২ জানুয়ারি আবু বক্কর সিদ্দিকের মা খোদেজা খাতুনও ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর পরিবারের চার সদস্যকে মুক্তাগাছা থানায় আটকে রেখে তাঁদের ওই সাড়ে ছয় শতক জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানিক মিয়া কয়েকজনের সহযোগিতায় জমিটি আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছ থেকে কিনেছেন বলে ভুয়া দলিল তৈরি করেন।

ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. মানিক মিয়া সংবাদ সম্মেলনে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে
প্রথম আলো

এদিকে আবু বক্কর সিদ্দিক আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মানিক মিয়ার কাছ থেকে তিনি কয়েক দফায় এক লাখ টাকা সুদে নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দিতে না পারায় এক বছর পর মানিক দাবি করেন, সেই টাকা ২ লাখ ৩০ হাজার হয়েছে। এর কিছুদিন পর প্রতারণার মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে জমিটি লিখে নেন। এ ব্যাপারে তাঁরা আদালতে মামলা করেছেন।