ভিক্ষার বদলে গাভি উপহার

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০ ভিক্ষুককে গাভি উপহার দেওয়া হয়। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের বড় মাঠ, ১৭ মার্চ
প্রথম আলো

গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভিক্ষা করে সংসার চলে নালাকী বেওয়ার। মানুষজনের নানা মন্তব্য তাঁকে অনেক সময় কষ্ট দিলেও বিকল্প কাজ না থাকায় তা ছাড়তে পারছিলেন না তিনি। ইচ্ছে থাকলেও এত দিন কোনো সহযোগিতাও মেলেনি তাঁর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার জেলা প্রশাসন তাঁকে ডেকে ভিক্ষার বদলে উপহার হিসেবে ধরিয়ে দেয় একটি গাভি। এমন উপহার পেয়ে বেজায় খুশি তিনি।

৬০ বছর বয়সী নালাকী বেওয়ার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার তেওয়ারিগাঁও গ্রামে। শুধু নালাকী নন, তিনিসহ উপজেলার আরও ১০০ জন পেয়েছেন গাভি উপহার। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলার ৬১টি সরকারি দপ্তর, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিরা তালিকাভুক্ত ভিক্ষুকদের বকনা বাছুর, চাল, ডাল, তেলসহ শুকনা খাবার ও মিষ্টান্নের খরচ বহন করেন।

নালাকী বেওয়া বলেন, লোকজনের কাছে ভিক্ষা চাইতে গেলে অনেক কথা শুনতে হয়। এখন থেকে গাভি লালন-পালন করবেন, আর ভিক্ষা করবেন না। বলতে বলতে দুই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে তাঁর।

গাভি উপহার পেয়ে মমতা বেওয়া বলেন, কেউ ডেকে নিয়ে গাভি দেবে, তা তিনি ভাবতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘কয়েক মাসের মধ্যে দুধ বিক্রি করে আয় করতে পারব। তখন আর মানুষের কাছে হাত পাততে হবে না।’

ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগে সহায়তা করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মুহম্মদ শহীদ উজ জামান বলেন, সমাজ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। এভাবে সবাই এগিয়ে এলে এই কঠিন কাজটিও সহজ হয়ে যায়।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান জানান, বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রাম ছিল মূলত দরিদ্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তাদের মুখে হাসি ফুটানো। তাঁর জন্মদিনে স্বল্প পরিসরে হলেও কিছু দুস্থ, অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে সেটাই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। আর সে উদ্দেশ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে শত ভিক্ষুকের মুখে হাসি ফুটানোর একটি বিশেষ উদ্যোগ হাতে নেয়। এ উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সরকারি দপ্তর, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিরা। যেসব দপ্তর, সংস্থা ও জনপ্রতিনিধি সহযোগিতা করেছেন, তাঁরাই পরবর্তী সময়ে সেই নির্দিষ্ট ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান ও মনিটরিং করবেন। পর্যায়ক্রমে জেলার সব ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করে জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচির অংশ উপলক্ষে গাভি বিতরণ অনুষ্ঠানে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেন, জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদরুদ্দোজা, সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার, ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক মুহম্মদ শহীদ উজ জামান, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।