বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে জেলেদের বিশেষ ভিজিএফের চাল ওজনে কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উপকারভোগী জেলেরা বিক্ষোভও করেছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
জেলেরা অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুন্নেছা, ইউপি সচিব মো. ইমরান হোসেন ও ইউপি সদস্যরা যোগসাজশে জেলেদের ওজনে কম দিয়ে চাল চুরি করেছেন। মিটারে পরিমাপ করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও বালতি দিয়ে মেপে চাল বিতরণ করেছেন তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাগরে ৬৫ দিন মৎস্য আহরণে বিরত থাকা ১ হাজার ৩৪৮ জেলের সহায়তা হিসেবে বিশেষ ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হচ্ছিল আজ। এটি তাঁদের জুলাই মাসের দ্বিতীয় কিস্তির চাল। ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে চাল বিতরণ করেন ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান মোসা. মুজিবুন্নেছা। সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চাল বিতরণ কার্যক্রম চলে। বিতরণের শুরু থেকেই প্রত্যেক জেলে ৩০ কেজি চাল পাওয়ার কথা থাকলেও তাঁদেরকে দেওয়া হয়েছে ২৫-২৬ কেজি। আজ ৮৮৬ জেলের মধ্যে এভাবেই ওজনে কম দিয়ে চাল বিতরণ করা হয়। পরে ওজনে চাল কম দেওয়ার প্রতিবাদে উপকারভোগী পাঁচ শতাধিক জেলে দুপুরে বিক্ষোভ করেন। জেলেদের বিক্ষোভের কারণে ঘণ্টাব্যাপী চাল বিতরণ বন্ধ থাকে।
আবু হোসেন, আবু সিদ্দিক, আজিজ গাজী ও শানু চৌকিদারসহ ১০–১২ জন জেলে বলেন, ‘ওজনে কম দিয়ে চাল চুরি করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। ৩০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের ২৫ থেকে ২৬ কেজি করে চাল দিয়েছেন।’
খবর পেয়ে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ ও অভিযোগের সতত্য মিলেছে। দেখা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদে ছয়টি ওয়ার্ডের জেলেদের বিশেষ ভিজিএফের চাল বিতরণ চলছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবের লোকজন মিটারের পরিবর্তে বালতি দিয়ে চাল মেপে জেলেদের দিচ্ছেন। বালতি দিয়ে মাপা চাল মিটারে ওজন করে দেখা গেছে, ৩০ কেজির পরিবর্তে ২৫-২৬ কেজি হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মজিবুন্নেছা, ইউপি সচিব মো. ইমরান হোসেন ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান মোসা. মুজিবুন্নেছা ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য। গত ৪ জুলাই ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল হক তালুকদার (৫৮) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে—তখন থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ওজনে চাল কম দেওয়ার কথা অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, বালতি দিয়ে চাল দেওয়ায় কিছু হেরফের হতে পারে।
ইউপি সচিব মো. ইমরান হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে যাঁরা চাল মেপেছেন, তাঁরা কিছু চাল কম দিয়েছেন। এতে কিছু ঝামেলা হয়েছে।’
আমতলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘৫০ কেজির চালের বস্তাগুলো না ভেঙ্গে ৫ জেলের মধ্যে একটি করে বস্তা বিতরণের নির্দেশ দিয়েছি। যাঁদের চাল কম দেওয়া হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে তাঁদের চাল সমন্বয় করে দিতে বলেছি।’