ভুট্টার চাষ কমেছে, কৃষকেরা ঝুঁকছেন ধানে

মাঠজুড়ে ধান আর ধান। জামালপুর গ্রাম, বদরগঞ্জ, রংপুর, ১৫ এপ্রিল
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ভুট্টার চাষ কমেছে। বেড়েছে ধানের চাষ। ভুট্টার চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় এবার কৃষকেরা ধান চাষে ঝুঁকেছেন। এই দুই উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে বেশি ধান চাষ হয়েছে। ভুট্টার চাষ কমেছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮০৮ হেক্টর জমিতে।

বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১টি পৌরসভা ও ১০ ইউনিয়ন নিয়ে বদরগঞ্জ উপজেলা গঠিত। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে দুই হাজার ৬৫০ হেক্টরে। চাষ কমেছে ৬০৮ হেক্টরে। ইরি–বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার ৪৫০ হেক্টরে, চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৯৯৫ হেক্টরে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ধান চাষ বেড়েছে ৫৪৫ হেক্টরে। গত মৌসুমে ৩ হাজার ১০০ হেক্টরে ভুট্টা এবং ১৬ হাজার ৯০০ হেক্টরে ধান চাষ হয়েছিল।

চলতি মৌসুমে তারাগঞ্জ উপজেলার ৫ ইউনিয়নে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ১৫০ হেক্টরে, চাষ হয়েছে ৯৫০ হেক্টর জমিতে। ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৭০০ হেক্টরে, চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ধান চাষ বেশি হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে।

ওই দুই উপজেলার অন্তত ১০ কৃষক ও কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ভুট্টা বাজারে বিক্রি হয়েছিল ১১-১২ টাকায় এবং ধান ১৭-১৮ টাকায়। কৃষকদের মতে, ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষে পরিশ্রম অনেক বেশি। জমি থেকে ভুট্টা সংগ্রহের পর স্থানীয় পদ্ধতিতে তা মাড়াই করা অনেক কষ্টকর। এ ছাড়া আগের মতো এখন শ্রমিকও মেলে না। ভুট্টা চাষে পরিশ্রম ও খরচ বেশি। আবার বাজারে ধানের চেয়ে ভুট্টার দাম কম। এসব কারণে এবার অনেক কৃষক ভুট্টা ছেড়ে বোরো ধান চাষে ঝুঁকেছেন। তাই দুই উপজেলায় ভুট্টার চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
তারাগঞ্জের মেনানগর গ্রামের কৃষক আজহারুল ইসলাম (৪৫) বলেন, ‘গতবার জোয়ার (ভুট্টা) নাগাচনো ৮৩ শতক জমিত। জোয়ার আবাদোদ ঝামলা খুব। দামও কম পাচি। সেই জন্যে এবার তাত ধান নাগাচি।’

বদরগঞ্জের আমরুলবাড়ি গ্রামের কৃষক ফজলুল হক বলেন, ‘ধানের চায়া ভুট্টার আবাদ করতে পরিশ্রম ও লোক লাগে বেশি। আবার মৌসুমের শুরুতে ভুট্টার দামও ছিল তুলনামূলক কম। সেই কারণে এবারে ভুট্টার চাষ না করি দুই একর মাটিত ধান গাড়চি।’
তারাগঞ্জ উপজেলা বাজারের ভুট্টা ও ধান ব্যবসায়ী আবদুল হাই বলেন, ‘চলতি মৌসুমে নতুন ভুট্টা ও বোরো ধান এখনো বাজারে ওঠেনি। তবে গত মৌসুমের ভুট্টা বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭-১৮ টাকায়, আর আমন ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৭-২৮ টাকায়। গত মৌসুমের শুরুতে ওই ধান কিনেছিলাম প্রতি কেজি ১৭-১৮ টাকায় আর ভুট্টা ১১-১২ টাকায়।’

বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, ‘কৃষকেরা যখন যে ফসলে দাম পান ভালো, তখন সেই ফসল চাষে ঝুঁকে পড়েন। বিগত বছরের আগে কয়েক বছর ধান চাষ করে কৃষকেরা উৎপাদন খরচ ওঠাতে পারেননি। তখন ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছিলেন। এবার দাম বেশি পাওয়ায় ধান চাষে ঝুঁকেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিক পরামর্শ ও তদারকির কারণে এবারে বোরো ধান ও ভুট্টাখেত খুব ভালো আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে ফলনে অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। বর্তমানে বাজারে দামের ঊর্ধ্বমুখীতে মনে হচ্ছে, এবার ওই দুই ফসল চাষ করেই কৃষকেরা লাভবান হবেন।’

বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মো. জোবাইদুর রহমান ও তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম জানান, কৃষকেরা সব সময় লাভজনক ফসলের চাষে ঝোঁকেন। ১০ বছর আগে ফলন ও দর ভালো পাওয়ায় গম চাষে ঝুঁকেছিলেন। সেই গম চাষ এখন নেই বললেই চলে। দর পেয়ে বিগত ৯ বছর ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছিলেন। এবার ভুট্টার দাম কম পাওয়ায় ধান চাষে ঝুঁকেছেন।