পাবনার সুজানগর উপজেলায় একটি ভুয়া সংগঠনের নামে বিভিন্ন সড়কের দুই পাশ থেকে গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোনো নিয়মনীতি না মেনেই সংগঠনটির মালিক উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক থেকে শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছেন বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা দাবি করেছেন।
ওই সংগঠনের নাম ‘সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্প’। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্প নামে কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব তাঁদের জানা নেই। এ নামে কোনো সংগঠন নিবন্ধনের আবেদন পর্যন্ত করেনি।
স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে গেছে, ভায়না ইউনিয়নের আট কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। সড়কের দুই পাশে বাবলা, কড়াইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। ১৫ থেকে ২০ বছর আগে সড়কগুলো নির্মাণের সময় স্থানীয় লোকজন সড়কের ভাঙন ঠেকাতে বাবলার বীজগুলো রোপণ করেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দুই পাশে ফসলের মাঠ। মাঝ দিয়ে চলে গেছে গ্রামীণ সড়ক। সড়কের দুই পাশ দিয়ে অযত্নে বেড়ে উঠেছে প্রচুর বাবলাগাছ। কিন্তু সড়কের একাংশের গাছ আর নেই। কেটে ফেলে রাখা হয়েছে সড়কের পাশেই। মাঝেমধ্যে ভ্যান এসে নিয়ে যাচ্ছে কাটা গাছগুলো।
স্থানীয় লোকজন বলেন, সাকো প্রতিবন্ধী সামাজিক বনায়ন প্রকল্প নামে ওই ভুয়া সংগঠনের সভাপতি পরিচয় দিয়ে ইমান আলী নামে এক ব্যক্তি বছরখানেক আগে গাছগুলো কাটতে শুরু করেন। তাঁর বাড়ি উপজেলা সদরের ভবানিপুর মহল্লায়। এক বছরের বিভিন্ন সময়ে তিনি দুলাই, সাতবাড়িয়া ও ভায়না ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক থেকে তিন শতাধিক গাছ কেটে নেন। গাছ কাটার সময় ইমান আলী স্থানীয় ব্যক্তিদের বলেন, তাঁর সংগঠনের নামে গাছগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তাই প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই তিনি গাছ কাটছেন।
গত শনিবার থেকে ইমান আলী নতুন করে ভায়না ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে গাছ কাটতে শুরু করেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা বাধা দিলে তিনি একই কথা বলেন এবং প্রায় ১০০টি বাবলাগাছ কেটে নেন। এতে লোকজনের সন্দেহ হলে তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সংগঠনটির কোনো অস্তিত্ব নেই।
উপজেলা সদরের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইমান আলী বন বিভাগের বাগানের মালি ছিলেন। বছর দেড়েক আগে তিনি অবসরে গেছেন।
এ বিষয়ে ইমান আলী বলেন, ‘২০ বছর আগে আমি সংগঠনের নামে গাছগুলো রোপণ করেছিলাম। এখন প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই কেটে নিচ্ছি।’
পাবনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, ইমান আলী নামে কেউ কোনো অনুমতিই নেননি। তিনি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গাছগুলো কেটেছেন। গাছ কাটার অনুমতি নিতে হলে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয় রয়েছে। এমনটি হলে তাঁরা জানতেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রওশন আলী বলেন, খবর পেয়ে ইতিমধ্যে তাঁরা ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ইমান আলী গাছগুলো কেটেছেন। তাঁরা প্রায় ৭০টি গাছ কাটার আলামত পেয়েছেন। গাছগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।