ভূরুঙ্গামারীতে শিশুশিক্ষার্থীকে মারধরে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক বরখাস্ত

ভূরুঙ্গামারীতে কওমি মাদ্রাসার এক শিশু শিক্ষার্থীকে মারধরের ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট
ছবি: সংগৃহীত

বাড়ির নির্ধারিত কাজ না লিখে অন্য লেখা জমা দেওয়ার কারণে কওমি মাদ্রাসার এক শিশুশিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট করেছেন শিক্ষক। মারপিটের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিশুটির পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন। এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠলে গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে সালিশি বৈঠকে ওই মাদ্রাসাশিক্ষককে বরখাস্ত করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

ঘটনাটি কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের ঢেবঢেবি বাজার কিসমত কুলছুম কওমি মাদ্রাসায় ঘটেছে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, রাতের ক্লাসে অভিযুক্ত মাদ্রাসাশিক্ষক এক হাতে একটি খাতা বা বই, অন্য হাতে একটি বেত নিয়ে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর গোলাপি পাঞ্জাবি পরিহিত এক শিশুশিক্ষার্থীকে আঘাত করেন। পরে সাদা পাঞ্জাবি পরা একজন শিশুশিক্ষার্থীকে মাথা নিচু করে ধরে মাটিতে লাগিয়ে পেছনে সজোরে কয়েকটি আঘাত করেন। এরপর তার হাত ধরে বেধড়ক পেটাতে পেটাতে মাটিতে আছড়াতে থাকেন। এ সময় ওই শিক্ষার্থী আর্তচিৎকার করতে থাকে।

এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠলে গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে সালিশি বৈঠকে ওই মাদ্রাসাশিক্ষককে বরখাস্ত করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার ওই শিশুশিক্ষার্থীর নাম লাল মিয়া। সে ওই মাদ্রাসার দ্বিতীয় জামায়াতের শিক্ষার্থী। তার বাবা ঢেবঢেবি বাজারের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন। আর অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম মো. আবু সাইদ।

শিশুটির বাবা মোতালেব হোসেন জানান, ঘটনাটি গত মার্চ মাসের ২৭ তারিখের। ছেলেকে বাড়ির কাজের জন্য নির্দিষ্ট একটি লেখা লিখে আনতে দিয়েছিলেন শিক্ষক আবু সাইদ। কিন্তু সে অন্য একটি লেখা লিখে নিয়ে যাওয়ায় এমন মারপিট করেছেন ওই শিক্ষক। ছেলে বাড়িতে এসে ঘটনাটি ভয়ে জানায়নি। মোতালেব হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলেকে ছাড়াও ওই শিক্ষক আরও তিন–চারজনকে একইভাবে নির্যাতন করেছেন।’

ঘটনাটি প্রায় দেড় মাস আগের। পরীক্ষা চলছিল সেই সময়। সে আমার সঙ্গে বেয়াদবি করে, তাই একটু শাসন করেছি।
মো. আবু সাইদ, অভিযুক্ত শিক্ষক

অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আবু সাইদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি প্রায় দেড় মাস আগের। সেখানে দ্বিতীয় জামায়াতের কোনো শিক্ষার্থী ছিল না। যারা ছিল, তারা তৃতীয় জামায়াতের শিক্ষার্থী। পরীক্ষা চলছিল সেই সময়। সে আমার সঙ্গে বেয়াদবি করে, তাই একটু শাসন করেছি।’

জানতে চাইলে মাদ্রাসার প্রধান মৌলভি শিক্ষক মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এমন কর্মের জন্য অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাইদকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেনকে বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার সকালে এসি ল্যান্ডসহ মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় কাউকে পাইনি। ওই শিক্ষককে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’