ভোটার তালিকায় ‘মৃত’, এক বছর ধরে মিলছে না বিধবা ভাতা

শানু বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্র

‘এত্তা কইর‌্যা যে কই, আমি মরি নাই, বাইচ্চাই আছি, কিন্তু কেউ মোর কতা হোনে না। সবাই কয় কাগজপত্রে তুমি মারা গেছ।’ বরিশালের মুলাদী উপজেলার ৬৫ বছর বয়সী শানু বেগম এভাবেই নিজের আক্ষেপের কথা বলছিলেন। শানু বেগম জীবিত আছেন, কিন্তু ভোটার তালিকার হালনাগাদ তথ্যে তাঁর নাম দেখানো হয়েছে মৃত হিসেবে। আর এ জন্য এক বছর ধরে বিধবা ভাতা পাচ্ছেন না এই নারী।

শানু বেগম উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের মৃত মন্নান ফরাজির স্ত্রী। তিনি জানান, ২২ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। দুই ছেলেই বেকার। মেয়েদের অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের পেছনে ঘুরে ঘুরে বিধবা ভাতার তালিকায় নাম ওঠান। সেই অর্থে কষ্টেসৃষ্টে তিনি সংসার টেনে নিচ্ছিলেন। কিন্ত বিপত্তি ঘটে বছরখানেক আগে। হঠাৎ ভাতার টাকা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি কিছুই টের পাননি তখন। ভেবেছিলেন হয়তো সরকারই ভাতা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

শানু বেগম বলেন, সপ্তাহ দুয়েক আগে গ্রামের এক বিধবা নারীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ওই নারী নিয়মিত বিধবা ভাতার টাকা পাচ্ছেন। এরপর তিনি ছুটে যান ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। সেখানে জানতে পারেন ২০১৯ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় তাঁকে মৃত উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্যই তাঁর নামে আর ভাতার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।

এরপর শানু বেগম ছুটে যান উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখানেও একই তথ্য জানানো হয়। এরপর এই কার্যালয়ে ভোটার আইডি কার্ড দেখান তিনি। তাঁরা শানু বেগমকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শওকত আলী তাঁকে জানান, ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় তথ্য সংগ্রহকারী চরকমিশনার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নিজাম উদ্দীন ওই নারীকে মৃত উল্লেখ করায় হয়তো এই বিপত্তি ঘটেছে।

সহকারী শিক্ষক মো. নিজাম উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যত দূর মনে পড়ে, হালনাগাদ কার্যক্রমের আগেই শানু বেগম ভোটার তালিকায় মৃত ছিলেন। হালনাগাদের সময় সেটাই উল্লেখ করা হয়েছে কেবল।

কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মন্টু বিশ্বাস বলেন, শানু বেগম মৃত নন, জীবিত, এটা তিনি অবগত। তবে এই সমস্যা সমাধানে উপজেলা নির্বাচন অফিস ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শওকত আলী বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। তাঁকে সমস্যাটির বিষয়ে লিখিত আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা সভাপতি অধ্যাপক শাহ্ শাজেদা বিষয়টি অমানবিক উল্লেখ করে বলেন, এমন গাফিলতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি হওয়া উচিত।