ভৈরবে ঘরে ঘরে জ্বর, তবে নমুনা পরীক্ষায় অনাগ্রহ

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের চণ্ডীবের মধ্যপাড়ায় চার সদস্যের একটি পরিবারের তিনজন জ্বরে পড়েছেন। এলাকায় অন্য ঘরগুলোতেও কেউ না কেউ জ্বরে ভুগছেন। এ নিয়ে পরিবারগুলোয় করোনাভীতি আছে। তবু নমুনা পরীক্ষার জন্য কেউ হাসপাতালমুখী হচ্ছেন না।
একই অবস্থা পৌর শহরের কমলপুর নিউটাউন এলাকার একটি পরিবারের। এই পরিবারেও তিনজন জ্বরে ভুগছেন। উচ্চশিক্ষিত কর্তাব্যক্তিটি একজন চাকরিজীবী। প্রথমজনের জ্বর শুরু হয় চার দিন আগে। এক দিনের ব্যবধানে অন্য দুজনের জ্বর আসে। তবে তাঁদের কেউ নমুনা দেননি। জানতে চাইলে চাকরিজীবী ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ভাবছি, নমুনা দিতে যাওয়া দরকার। আবার ভাবছি, এটা সাধারণ মৌসুমি জ্বর কি না। কারণ, আমাদের মহল্লার প্রায় সব বাড়ি থেকে জ্বরের কথা শোনা যাচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর শহরের অনেক বাড়িতে জ্বরে ভোগা রোগী আছেন। এ নিয়ে তাঁরা নিজেদের উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের কথা ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে বলাবলি করছেন। কেউ কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসুস্থতার কথা জানিয়ে দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া চাইছেন। কিন্তু কেউ আর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

ভৈরব করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা বলেন, কাগজে-কলমে ভৈরবের করোনা পরিস্থিতি আশাজাগানিয়া। এটাও ঠিক সার্বিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালোও হয়েছে। তবে সামাজিক সংক্রমণের সর্বশেষ মাত্রা যাচাইয়ে এত অল্পসংখ্যক নমুনা যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে যাঁদের শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে, তাঁরাও যদি নমুনা জমা দিতেন, তাহলেও অন্তত একটা ধারণা পাওয়া যেত। উচ্চ তাপমাত্রা যেহেতু করোনার গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ, সে কারণে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কীভাবে নমুনা দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করা যায়, তা নিয়ে ভাবছেন তাঁরা।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ভৈরবে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন ১০ এপ্রিল। তিনি ছিলেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে উপজেলায় করোনায় সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৬০৯। এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১৪ জন। উপজেলায় মাত্র ৩ হাজার ৩৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। অর্থাৎ, পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ২০ শতাংশ। ভৈরবে জুন মাসে করোনা পরিস্থিতি নাজুক পর্যায়ে যায়। ওই মাসে করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৩৯২ জন। তখন দিনে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৬০ শতাংশ। রোগী শনাক্ত, মৃত্যু ও নমুনা—এই তিন সূচকেই জেলায় শীর্ষে ছিল ভৈরব।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে ভৈরবে মোট নমুনা সংগ্রহ হয় ৬৬৬ জনের। জুনে সংখ্যাটা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়। ওই মাসে সংগ্রহ হয়েছিল ১ হাজার ৫৩২ জনের। জুলাই থেকে আবার কমতে শুরু করে। জুলাইয়ে নমুনা দেন মাত্র ৪৩৮ জন। আগস্ট মাসে সংগ্রহ হয় ৩০৮ জনের নমুনা। সেপ্টেম্বর মাসেও একই ধারা বজায় আছে। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ছয় দিনে ৭৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, চারদিক থেকে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আসছে। কিন্তু এই পর্যন্তই। এরপর আর খবর নেই। এত কিছুর পরও যদি জনসাধারণের মধ্যে এতটুকু সচেতনতা না বাড়ে, তাহলে হতাশা হওয়া ছাড়া উপায় নেই। যাঁদের শরীরে তাপমাত্রা রয়েছে, তাঁদের প্রত্যেককে করোনা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষার প্রতিবেদন করোনা ‘নেগেটিভ’ এলে অসুস্থ ব্যক্তি স্বস্তি পাবেন। এটা তাঁকে অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠার ব্যাপারে মানসিক শক্তি জোগাবে।