ভোটকেন্দ্রে পুলিশের তদন্ত কমিটি, গ্রামবাসীকে নিয়ে সভা

শাহ মিজান শাফিউর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি এলাকাবাসীর সঙ্গে সভা করেন। বুধবার বেলা ১১টায় পীরগঞ্জের ঘিডোব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের খনগাঁও ইউপি নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে গুলিতে তিনজন নিহত ও আরও তিনজন আহত হওয়ার ঘটনা তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের কমিটি করেছে পুলিশ। রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিআইজি) শাহ মিজান শাফিউর রহমানকে প্রধান করে গঠিত এই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

শাহ মিজান শাফিউর রহমান তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য রংপুর রেঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার খালিদ বিন নুর ও পীরগঞ্জ সার্কেলের এএসপি আহসান হাবিবকে নিয়ে আজ বুধবার বেলা ১১টায় ঘটনাস্থল সেই ভোটকেন্দ্র পীরগঞ্জের ঘিডোব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে সভা করেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম। কমিটি ওই দিনের ঘটনা জানতে প্রত্যক্ষদর্শী ঘিডোব গ্রামের হাফেজ নুরুজ্জামান, মঞ্জুর আলম ও গ্রাম পুলিশ সগেন চন্দ্রের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন।

শাহ মিজান শাফিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকেই খুঁজছি। নিরীহ মানুষ কাউকে হয়রানি করা হবে না। আমরা সেটা দেখব।’ সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে এডিআইজি বলেন, ‘কোনো গ্রামবাসী ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ছেড়ে দেবেন না। সাধারণ মানুষের কোনো ভয় নেই।’

পুলিশের সভা শেষে আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত আশপাশের সাতটি বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে। বাজারগুলোতে গিয়ে দু–তিনজন নারী-শিশু ছাড়া কারও দেখা পাওয়া যায়নি। গ্রামের বাড়িগুলোতেও বৃদ্ধ ও নারীরা ছাড়া কোনো পুরুষ লোক দেখা যায়নি। ঘ্যাননগর বন্ধ বাজারের বেঞ্চে বসে ছিলেন দোকানদার তমিজউদ্দীনের কিশোর ছেলে আল মাহমুদ (১৩)। বাবা কোথায় জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমার বাবা লুকিয়ে আছেন। পুলিশ ধরবে কি না, এখনো বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেই বাবা দোকান খুলবেন।’

গত রোববার তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের দিন উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিজিবি-পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হন। আহত হন আরও তিনজন।

শান্তিনগর বাজারের একটি বন্ধ দোকানের বেঞ্চে বসা ঘিডোব স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অবিনাশ চন্দ্র বলে, ‘আমাদের চায়ের হোটেল আছে। দোকান বন্ধ রেখে আমাদের পরিবারের কষ্ট হচ্ছে। আমি দোকান পাহারা দিচ্ছি। খবর ভালো হলেই আব্বাকে খবর দিব, তিনি চলে আসবেন।’

গত রোববার তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের দিন উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিজিবি-পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হন। আহত হন আরও তিনজন। এ ঘটনার পর কেন্দ্রের নির্বাচনী কর্মকর্তাকে আটকে রাখা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবরুদ্ধ ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গত সোমবার পীরগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনকে। এর পর থেকেই গ্রেপ্তার-আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সাত গ্রামের পুরুষেরা। বাজারের দেড় শতাধিক দোকানপাটও সেই থেকে বন্ধ রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাংসদ জাহিদুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ওই সব গ্রাম ও বাজারে গণসংযোগ করেন। তিনি মানুষকে মামলার ভয় না করে নিজ নিজ দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করতে এবং নিজের বাড়িতে থেকে আমন ধান কাটা–মাড়াইয়ের কাজ চালিয়ে যেতে অনুরোধ জানান। খনগাঁও ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সহিদ হোসেনও পৃথকভাবে গতকাল ওই সব বাজার ও গ্রামের মানুষকে মামলার ভয় না করার জন্য সাহস দেন।

পীরগঞ্জ থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মামলা হলেও এ পর্যন্ত কাউকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। ওই সব গ্রামে মামলার পর কোনো পুলিশি অভিযানও হয়নি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত ব্যক্তিরা হলেন ঘিডোব গ্রামের অবিনাশ রায়ের ছেলে আদিত্য কুমার রায় (২২), হাবিবপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মো. সাহাবুলি (৩৭) এবং ছিট ঘিডোব গ্রামের মৃত তমিজউদ্দীনের ছেলে মোজাহারুল ইসলাম (৩৫)। আহত ব্যক্তিরা হলেন ঘিডোব গ্রামের আবদুল বারীর স্ত্রী রহিমা বেগম (৬৫), খনগাঁও গ্রামের উজ্জ্বল ইসলামের ছেলে গোলাম রব্বানী (২৭) ও হাবিবপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাইফুর রহমান (১৭)।