ভোটার টানতে উপঢৌকন

গুরুদাসপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর নিবার্চনী অফিসে চলছে খিচুরি ভোজ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেপ্রথম আলো

ভোট যতই ঘনিয়ে আসছে, ভোটারদের নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার টানতে প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণ লঙ্ঘন করে ভোটারদের উপঢৌকন দিচ্ছেন। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার সুযোগও নিচ্ছেন সুবিধাবাদী কিছু ভোটার।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ধ্যা হলেই গুরুদাসপুরের নির্বাচনী কার্যালয়গুলোতে চলছে নানা রকম আপ্যায়ন। তবে সাধারণ চা বা পান-সুপারিতে তুষ্ট নন অনেক ভোটার। এ ধরনের ভোটারদের টানতে তখন বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বন্ধুচুলা, মুঠোফোনসহ গৃহস্থালির নানা উপহার।

সম্প্রতি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড খালিফাপাড়ায় ৫০টি পরিবারকে স্বাস্থ্যসম্মত রান্নার চুলা বন্ধুচুলা বিতরণের অভিযোগ উঠেছে দুজন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে। দুজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে বন্ধুচুলা বিতরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে অন্য প্রার্থীরাও এ প্রতিযোগিতায় শামিল হতে শুরু করেন। তাঁদের পক্ষ থেকেও ভোটারদের ভালো নাশতা-খাবার দিয়ে আপ্যায়নসহ মুঠোফোন ও গৃহস্থালিসামগ্রী বিতরণের ঘটনা জানা যাচ্ছে। প্রার্থীদের এই অনিয়মের প্রতিযোগিতায় কিছু ভোটার উপকৃত হলেও বেশির ভাগ ভোটার নির্বাচনী এ পরিবেশ দেখে বিব্রত হচ্ছেন।

সাধারণ চা বা পান-সুপারিতে তুষ্ট নন অনেক ভোটার। এ ধরনের ভোটারদের টানতে তখন বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বন্ধুচুলা, মুঠোফোনসহ গৃহস্থালির নানা উপহার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারের সংখ্যা ২ হাজার ৫০০। বিপরীতে এখানে এবার কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ৬। তাঁরা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর মো. সাহেদুর রহমান (টেবিলল্যাম্প), সাবেক কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন (উটপাখি), মো. সুমন রানা (পাঞ্জাবি), ফজলুর রহমান (পানির বোতল), সাইদুল ইসলাম (ডালিম) ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী হাফিজা খন্দকার (কলম)।

ভোটার টানতে এই ভ্যানে করে বাড়ি বাড়ি বন্ধুচুলা পাঠাচ্ছিলেন একজন কাউন্সিলরপ্রার্থী। পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে
সংগৃহীত

খলিফাপাড়া মহল্লার কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ভোটার অনুপাতে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। তার ওপর ব্যক্তিগত ‘ইগো’ আর পারিবারিক আত্মমর্যাদাবোধের কারণে কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়ে পরাজিত হতে চাচ্ছেন না অনেকে। ফলে যেকোনো মূল্যে নির্বাচিত হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এই প্রার্থীরা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই যেন বাড়ছে প্রার্থীদের মধ্যে এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটার টানতে ছুটছেন বাড়ি বাড়ি। বিশেষ করে খেটে খাওয়া দিনমজুর ও নিম্নবিত্ত পরিবারকে বেছে নিচ্ছেন নিজের পক্ষে টানতে। সম্প্রতি দুজন কাউন্সিলর প্রার্থী কমপক্ষে ৫০টি পরিবারকে বন্ধুচুলা সরবরাহ করেছেন। প্রার্থীরা ভ্যান ভাড়া করে ভোটারদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন এসব চুলা।

গুরুদাসপুরে নিবার্চনকে ঘিরে প্রার্থীর সমথর্কদের প্রচারণা মিছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে চাঁচকৈড় পুরানপাড়া মহল্লায়
প্রথম আলো

বন্ধুচুলা ও গৃহস্থালিসামগ্রী পেয়েছেন, এমন তিনটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় খুশি হয়ে বন্ধুচুলা দেওয়া হয়েছে তাঁদের। তাঁদের ভাষ্য, কাউন্সিলর প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নেয়, কিন্তু বিভিন্ন সময় সুবিধা কার্ড পেতে গেলে টাকা ছাড়া কাজ হয় না। বাধ্য হয়ে ভোটের আগে এ সুবিধা নিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মতো অনেক পরিবার নিচ্ছেন নানা রকম উপঢৌকন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিন কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, ভোটের পরিবেশ আগের মতো নেই। মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন হয়েছে। বেড়েছে প্রতিযোগীর সংখ্যা। এখন চা পানে খুশি হয় না বেশির ভাগ ভোটার। বাধ্য হয়ে নানা রকম উপঢৌকন দিতে হচ্ছে ভোটারদের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন বলেন, ভোটারদের আপ্যায়ন ও উপঢৌকন দেওয়া আচরণবিধির পরিপন্থী। অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।