ভোটারদের পা ধুয়ে দিয়ে কথা রাখলেন পরাজিত প্রার্থী

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থী আলা বক্স তাহের নির্বাচনের সময় দেওয়া কথা রাখতে নিজ হাতে ভোটারদের পা ধুয়ে দেন। আজ শুক্রবার দুপুরে কবিরহাটে আলা বক্সের গ্রামের বাড়িতে
প্রথম আলো

শেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে তিনি ভোটারদের কথা দিয়েছিলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় যা–ই হোক, ভোটারদের পা ধুয়ে দিয়ে তিনি সম্মান জানাবেন। ওই নির্বাচনে তিনি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু ভোটারদের দেওয়া কথা তিনি ঠিকই রাখলেন। আজ শুক্রবার উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রতিটি থেকে একজন করে প্রতিনিধি ভোটারের পা ধুয়ে দিয়ে তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছেন।

আলোচিত এই ঘটনার জন্ম দিয়েছেন নোয়াখালীর কবিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আলা বক্স তাহের ওরফে টিটু। তিনি গত বছর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় হন। নির্বাচনের সময় দেওয়া কথা রাখতে আজ তিনি তাঁর বাড়িতে ভোটারদের পা ধুয়ে দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে আলা বক্স তাহের তাঁর গর্ভধারিণী মা হোসনে জাহান বেগমের পা ধুয়ে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পা ধোয়ানোর কর্মসূচি’ সূচনা করেন। এরপর তিনি একে একে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সাধারণ ভোটারদের প্রতিনিধি হিসেবে ১০ জন ভোটারের পা ধুয়ে দেন।

নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরও চেয়ারম্যানপ্রার্থী আলা বক্স আমার মতো একজন সাধারণ ভোটারকে যে সম্মান দিয়েছেন, তা নজিরবিহীন। আমি বাকি জীবনেও এই সম্মানের কথা ভুলতে পারব না।
সলিম উল্যাহ, কবিরহাটের চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা

পা ধুয়ে দেওয়ার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ভোটাররা এবং উপস্থিত শত শত মানুষ। এই ভোটারদের মধ্যে একজন চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের সলিম উল্যাহ। তাঁর পা ধুয়ে দেওয়ার সময় তিনি কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরও চেয়ারম্যানপ্রার্থী আলা বক্স তাঁর মতো একজন সাধারণ ভোটারকে যে সম্মান দিয়েছেন, তা নজিরবিহীন। তিনি বাকি জীবনেও এই সম্মানের কথা ভুলতে পারবেন না।

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থী আলা বক্স তাহের নির্বাচনের সময় দেওয়া কথা রাখতে নিজ হাতে ভোটারদের পা ধুয়ে দেন। এ উপলক্ষে আলা বক্সের প্রচারণা ব্যানার
সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে আলা বক্স তাহের বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে কবিরহাট পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারকালে তিনি ভোটারদের কথা দিয়েছিলেন, জয়-পরাজয় যা–ই হোক, তিনি ভোটারদের পা ধুয়ে দিয়ে তাঁদের প্রতি সম্মান জানাবেন।

আলা বক্স তাহের বলেন, নির্বাচনে দেওয়া কথা অনুযায়ী তিনি ভোটার প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকে একজন করে ভোটারকে তাঁর বাড়িতে এনে সম্মানের সঙ্গে তাঁদের পা ধুয়ে দিয়েছেন। ভোটারদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা থেকেই তিনি এই কাজ করেছেন।

২০১৯ সালের ৩১ মার্চ কবিরহাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনের দুই দিন আগে ২৮ মার্চ কবিরহাট বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলা বক্স তাহেরের কর্মীদের ওপর গুলির ঘটনার পর নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এরপর ওই বছরের ১৪ অক্টোবর ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম। স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ উপস্থিত থেকে ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন।

২০১৯ সালের ৩১ মার্চ কবিরহাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনের দুই দিন আগে ২৮ মার্চ কবিরহাট বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলা বক্স তাহেরের কর্মীদের ওপর গুলির ঘটনার পর নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এরপর ওই বছরের ১৪ অক্টোবর ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আলা বক্স তাহের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কামরুন নাহার শিউলীর কাছে পরাজিত হন। কামরুন নাহার শিউলী নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রী।