ভোলার দুগ্ধশিল্পে সুবাতাস

ভোলায় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হতো ৩৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। এখন হয় ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৭৬ মেট্রিক টন।

খামারে দুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের একটি খামারে
ছবি: প্রথম: আলো

মহিষের দুধের কাঁচা দধির জন্য খ্যাত ভোলায় দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে দুগ্ধশিল্পের। জেলায় দুধ উৎপাদিত হচ্ছে চাহিদার চেয়ে বেশি। দামও পাওয়া যাচ্ছে। এ খাতে যুক্ত পরিবারে ফিরছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারলে ভোলায় এই শিল্প আরও টেকসই হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এমন বাস্তবতায় আজ বুধবার (১ জুলাই) প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস।

দুগ্ধ খাতে নজর বাড়াতে ২০০১ সাল থেকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) উদ্যোগে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছরে দুগ্ধ দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘পুষ্টি-পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে টেকসই দুগ্ধশিল্প’। দিবসটি উপলক্ষে ভোলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চিত্রাঙ্কন, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, বিনা মূল্যে শিক্ষার্থীদের দুগ্ধপান, শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

বিশ্বজুড়ে দুধ একটি স্বীকৃত পুষ্টিকর খাবার। দুধে আছে ক্যালসিয়াম, যা হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য জরুরি। আছে আমিষ, যা শরীরে শক্তি জোগায়। এ ছাড়া দুধে পাওয়া যায় পটাশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন এ, জিংকসহ নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিবিদেরা দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ভোলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপপরিচালক ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল কুমার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানুষের প্রতিদিন গড়ে ২৫০ মিলি দুধ পান করার দরকার। মানুষ প্রতি এই পরিমাণ দুধ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে না। বাংলাদেশে বর্তমানে এই লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ১৭০ মিলি। এই পরিমাণ দুধ উৎপাদন করতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দেশে ক্রমে দুধ পান ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিমাণ অনুযায়ী দুধ উৎপাদন করতে পারবে বাংলাদেশ।

বর্তমানে প্রতিদিন জাতীয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভোলায় দুধের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার মেট্রিক টন বেড়েছে।
ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল কুমার, উপপরিচালক, প্রাণিসম্পদ কার্যালয়, ভোলা

দুধ উৎপাদনে বেশ এগিয়ে ভোলা। ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন জাতীয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভোলায় দুধের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার মেট্রিক টন বেড়েছে। ভোলার লোকসংখ্যা ২০ লাখ ৯৯ হাজার। জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, প্রতিদিন জনপ্রতি ১৭০ মিলি হিসেবে দুধের দরকার হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন। প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৭৬ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ১৬ হাজার মেট্রিক টন মহিষের। বাকিটা গরুর। এখানে উদ্বৃত্ত থাকে ১৪ হাজার ৫২৬ মেট্রিক টন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ভোলায় ১৮৪টি বড় খামারসহ পরিবারভিত্তিক খামারে প্রতিদিন দুধ উৎপাদিত হতো ৩৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। এখন সেখানে ৭০৫টি বড় খামারসহ পরিবারভিত্তিক খামারে ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৭৬ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। এ বিপুল পরিমাণ দুধ উৎপাদনে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতা। ভোলার গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস) পরিবারভিত্তিক খামার গড়ে তুলতে ঋণ, বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ চিকিৎসাসহ সহায়ক উপকরণ দিচ্ছে। সহায়তা করা হচ্ছে দুধের বাজার সৃষ্টিতে। ভোলায় উৎপাদিত দুধে কাঁচা, মিষ্টি দইসহ নানা প্রকার দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। এসব পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জানা যায়, ভোলায় ৫ লাখ ৯৫ হাজার গরু ও ১ লাখ ২৪ হাজার মহিষ রয়েছে। জেলাটিতে গবাদিপশুর ছোট–বড় খামার আছে ১২ হাজার ৪০০টি। সব মিলিয়ে জেলার মোট জনসংখ্যার ৫৫-৬০ ভাগ মানুষ গরু-মহিষসহ গবাদিপশু পালনের সঙ্গে যুক্ত।

দিন দিন গবাদিপশুর দানাদার খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন খামারিরা। তাঁরা বলছেন, খাদ্যের দাম যে অনুপাতে বাড়ছে, দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্যের দাম সেভাবে বাড়ছে না। সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের আকতার ডেইরি ফার্মের পরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, তাঁর খামারের ৩৫০টির বেশি গরু আছে। এর মধ্যে ১০০টির মতো গরুতে প্রতিদিন প্রায় ৪২০ কেজি দুধ উৎপাদিত হয়। এ দুধ তিনি গাড়িতে করে বাড়ি বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন ৬০ টাকা লিটার দরে। এ ছাড়া ঘি, মাখন ও দই তৈরি করেও বিক্রি করছেন।