ভোলায় মৎস্য খাতে ২৩ কোটি টাকার ক্ষতি

৩ হাজার ১৬টি খামার ভেসে গেছে, যার আয়তন ৪৩৭ হেক্টর। এ খামারের মালিকের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৫৩৭

জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে লোকালয়। লোকজন মাছ ধরায় ব্যস্ত। গত ২৮ মে চরফ্যাশন উপজেলার চরপাতিলায়
প্রথম আলো

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরপাতিলা। জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকা প্লাবিত। পুকুর-ঘের ভেসে গেছে। রাস্তাঘাট, উঠান-আঙিনায় পানি ঢুকেছে। ঝাঁকিজাল নিয়ে মাছ ধরায় ব্যস্ত স্থানীয় লোকজন। এই চিত্র গত ২৮ মে দুপুরের। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উঁচু জোয়ারের পানিতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।

চরপাতিলার মতো চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া, চরপাতা ও মদনপুর, সদর উপজেলার রাজাপুর, ধনিয়া, কাচিয়া ও ভেলুমিয়া, লালমোহন উপজেলার চর শাহাজালাল ও চর কচুয়া এলাকায় একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। জেলা মৎস্য কার্যালয়ের হিসাবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জেলার প্রায় ৪১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পুকুর-ঘেরের অবকাঠামো, মাছ ও পোনা নষ্ট হয়েছে। পুকুরমালিক ও খামারিদের প্রায় ২৩ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। তবে খামারি, পুকুর ও ঘেরমালিকদের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৪০ কোটি টাকা।

চরপাতিলার বাসিন্দা ইউপি সদস্য মো. বাদশা বলেন, চরপাতিলার তিন শতাধিক খামার ডুবে গেছে। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

কুকরি-মুকরি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, জোয়ার–জলোচ্ছ্বাসে ইউনিয়নের ছয় শতাধিক মাছের পুকুর ও খামার ভেসে গেছে। এতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের চারপাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। এ ইউনিয়নের লোকজন পুকুর ও খামারের চারপাশে উঁচু বাঁধ দিয়ে মাছের চাষ করেন।

ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে এ ইউনিয়নের চর টবগী গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালামের মাছের খামার ভেসে গেছে। তাঁর ৩৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

প্রায় দুই লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের। মাছ চাষের আয় থেকেই তাঁর সংসার চলে।

মদনপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল খালেক বলেন, মদনপুরের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস নদীতে মাছ ধরা ও কৃষিকাজ করা। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের পাকিস্তান বাজারের মো. ফারুক (৪৩) ঋণ নিয়ে খালের ভেতর খাঁচায় ও পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাষ করে আসছেন। জোয়ারে তাঁর ১৮টি খাঁচা ও ২টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তাঁর চাচাতো ভাই তারেকের প্রায় ৩০ হাজার পোনা মাছ ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে তাঁদের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ফারুক বলেন, জলোচ্ছ্বাসে সব উল্টে গেছে। কোনো বাঁধ মানেনি।

সদর উপজেলার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুদ রানা বলেন, বাঁধের বাইরে তাঁর ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ড। জলোচ্ছ্বাসে ইউনিয়নের ৬০০ মাছের পুকুর-খামার ভেসে গেছে।

লালমোহন উপজেলার বদরপুর, লর্ডহার্ডিঞ্জ, ফরাজগঞ্জ ও ধলীগৌরনগর; বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকা, হাসাননগর, পক্ষিয়া, গঙ্গাপুর ও সাচড়া; তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচড়া, সোনাপুর, চাঁদপুর ও চাচড়া ইউনিয়নের চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘের-পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, ইয়াসের প্রভাবে ভোলার ৩ হাজার ১৬টি খামার ভেসে গেছে, যার আয়তন ৪৩৭ হেক্টর। এ খামারের মালিকের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৫৩৭। এতে প্রায় ২৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর ও খামারমালিকদের নাম পাঠাতে বলেছে। তালিকা তৈরি হলে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে তিনি জানেন না।