ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় গজনী অবকাশকেন্দ্রে

শুক্রবার দুপুরে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশ কেন্দ্রে দর্শনার্থীরা
দেবাশীষ সাহা রায়

করোনা বিপর্যয় মোকাবিলা করে সচল হচ্ছে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে অবস্থিত গজনী অবকাশকেন্দ্র। নতুন বছর ২০২১ সালের শুরুতেই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্রটি। শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আনন্দে মাতেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভ্রমণপিপাসুরা। অনেক দিন পর ভ্রমণপ্রেমীদের এমন উপচেপড়া ভিড়ে খুশি সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে পর্যটনকেন্দ্রে আগত দর্শনার্থীদের অধিকাংশই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়ের গজনী এলাকাটি ব্রিটিশ আমল থেকেই পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিত। প্রায় ২০০ ফুট উঁচু টিলায় নির্মাণ করা হয়েছে তিনতলাবিশিষ্ট ‘অবকাশ ভবন’। এটি পর্যটকদের জন্য রেস্ট হাউস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সমতল ভূমি থেকে অবকাশ ভবনে ওঠানামা করার জন্য পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় আঁকাবাঁকা ‘পদ্মসিঁড়ি’। আছে পাতালপুরী, মৎস্যকন্যা, হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য। গারো পাহাড়ের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আকাশচুম্বী সাইট ভিউ টাওয়ার। এখানে উঠলে চোখে পড়বে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সুউচ্চ পর্বতরাশি। সবুজে সবুজে ভরা পাহাড়।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নতুন করে পাহাড়ের বুকজুড়ে তৈরি করা হয়েছে সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পড়ন্ত বিকেলে ছোট ছোট নৌকায় করে বেড়ানোর জন্য রয়েছে লেক। শিশু দর্শনার্থীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক।

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড়। শুক্রবার দুপুরে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকায়
প্রথম আলো

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, গজনী অবকাশের বিভিন্ন স্থানে বিপুলসংখ্যক ভ্রমণপিপাসু মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ সেলফি তুলছেন। কেউবা প্রিয়জনের ছবি মুঠোফোনে ক্যামেরাবন্দী করছেন। শিশুদের পদচারণায় চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক ছিল সকাল থেকেই মুখর।

জামালপুর থেকে আসা দর্শনার্থী মো. শাহরিয়ার বলেন, করোনায় দীর্ঘদিন ঘরে বন্দী থাকার পর আজ শুক্রবার পরিবারের সবাইকে নিয়ে গজনী অবকাশে বেড়াতে এসেছেন। গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে খুব আনন্দ লাগছে।

দর্শনার্থীদের আগমনে গজনী অবকাশ পুনরায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহিন মিয়া। তিনি বলেন, এমন দর্শনার্থী প্রতিদিন থাকলে করোনার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

পর্যটনকেন্দ্রের প্রবেশদ্বারের ইজারাদার শাহজাহান সরকার বলেন, শুক্রবার ছোট-বড় প্রায় ২০০ গাড়ি দিয়ে পর্যটকের আগমন ঘটেছে। করোনাকালে আজই সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আগমন হয়েছে।

ঝিনাইগাতীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যাঁরা মাস্ক নিয়ে আসেননি অথবা মাস্ক হারিয়ে ফেলেছেন, তাঁদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর গজনী অবকাশে দর্শনার্থী বেড়েছে। দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারেন, সে জন্য অবকাশকেন্দ্র এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।