ভ্রাম্যমাণ আদালত এলে পেঁয়াজের এক দাম, চলে গেলে অন্য

রাজশাহীর পেঁয়াজের বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। বুধবার নগরের মণিচত্বর মাস্টারপাড়া বাজারেপ্রথম আলো

রাজশাহীর পেঁয়াজের বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। পেঁয়াজের দাম বেশি রাখায় কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি কমে যায় ১৫ থেকে ২০ টাকা। আগের দিন ভারতের পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৮০ টাকা।
তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে যাওয়ার পর বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আগের দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা দেশি পেঁয়াজ কিনেছেন ৭৫ টাকায়। সেই পেঁয়াজ তাঁরা কীভাবে ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি করবেন। জরিমানার ভয়ে তাঁরা কিছু সময় কম দামে বিক্রি করেছেন।  

রাজশাহী নগরের মণিচত্বর মাস্টারপাড়া বাজারে সকালে অভিযান শেষে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। পেঁয়াজের মজুত যথেষ্ট রয়েছে। রাজশাহীতে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের মজুত আছে ৫৭ হাজার টন। রাজশাহীতে সারা বছরের চাহিদা আছে ৪৪ হাজার টন। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়াটা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য। তাই তাঁরা মনিটরিং করছেন। তিনি জানান, প্রত্যেকটি উপজেলায় আলাদা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছে। রাজশাহী নগরের ছয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে একযোগে। কোথাও কোনো ধরনের অসংগতি পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিছু জায়গায় মূল্যবৃদ্ধির জন্য ছোটখাটো জরিমানাও করা হয়েছে। পরে জরিমানার পরিমাণ জানানো হবে।

রাজশাহীর পেঁয়াজের বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। বুধবার নগরের মণিচত্বর মাস্টারপাড়া বাজারে
প্রথম আলো

বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে ডেকে ডেকে ৪০ টাকা দরে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন এক বিক্রেতা। এর কিছুক্ষণ পর ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে গেলে দাম আবার ৫০ টাকা হয়ে যায়। এর কারণ জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, জরিমানার ভয়ে দাম কিছুক্ষণের জন্য কমিয়েছিলেন। তাঁর কেনাই পড়েছে ৪৫ টাকা করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকাকালে আজিজুল ইসলাম নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘এই গরিব দেশে পেঁয়াজের দাম এত বেশি হবে কেন? ৩৫-৪০ টাকায় ভারতীয় পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছি। দেশি পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায়। লাভ করছি না।’ এর ২০ মিনিট পর তাঁকে ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এই বাজারের বড় ব্যবসায়ী হাসিবুল ইসলাম বলেন, কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রয়োজন হবে না। আমদানি বাড়লে এমনিতেই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। আজকে ব্যবসায়ীরা ৭৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনে কীভাবে ৬০ টাকায় বিক্রি করবে? আরেক ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বুধবার দেশি পেঁয়াজ ৭৫ টাকা ও ভারতের পেঁয়াজ ৫০ টাকা দরে এনেছেন। তাঁরও প্রশ্ন, এই ক্ষতি দিয়ে কীভাবে পেঁয়াজের ব্যবসা করবেন তিনি।
ভারতের পেঁয়াজ সকাল বেলা ৪৮ টাকা দরে কিনে ৬০ টাকা করে বিক্রি করছিলেন রফিকুল ইসলাম। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দাম কমিয়ে ৪৫ টাকা করে নেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে যাওয়ার পর তিনি পরে ৫৫-৬০ টাকা দরে এই পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। তাঁর দোকানের পাশে এক বস্তা দেশি পেঁয়াজ রাখা ছিল। এই পেঁয়াজ তিনি বিক্রি করছেন না। তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ সকালে তিনি কিনেছেন ৭৫ টাকা দরে। তাঁর কমপক্ষে ৭৮ টাকা করে বিক্রি করতে হবে। পাবনায় দেশি পেঁয়াজের দর কমানো হলে এখানে এমনিতেই কমে যাবে বলে তাঁর ধারণা। রফিকুলের মতো অনেক বিক্রেতাকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়নি।