ভ্রাম্যমাণ আদালতে হামলার ঘটনায় মামলা, বালু তোলা বন্ধ

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় সোমেশ্বরী নদীতে অবৈধভাবে বালু তোলার সময় পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে হামলার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার মামলা হয়েছে। হামলার পর নদীর ১ নম্বর ঘাটে বালু তোলা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

আজ বেলা ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের তহসিলদার মো. আবদুল মান্নান বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন। এতে বালু ব্যবসায়ী বিভাস সরকার, এমদাদুল মিয়া, সুলতান মিয়া, হজরত আলীসহ ১৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ নুর এ আলম বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

গতকাল বুধবার দুপুরে সোমেশ্বরীর ১ নম্বর ঘাটের দেবথৈল এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নারায়ণ চন্দ্র বর্মণের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। তাঁদের ওপর হামলা চালান বালু ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলা প্রশাসন থেকে সোমেশ্বরীর পাঁচটি বালুমহাল প্রায় ৫৬ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর ঘাটের মহালটি ২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকায় ইজারা নেন নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনের সাবেক সাংসদ মোশতাক আহমেদ। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাকস বিডি কোম্পানির নামে এ ইজারা নেন। প্রতিটি ঘাটের ইজারাদার সরকারদলীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো নিয়মনীতি না মেনে বালু তুলছেন। তাঁরা স্থানীয় ব্যক্তিদের সুবিধা-অসুবিধা গুরুত্ব দেন না।

কয়েকজন বলেন, ঘাটগুলোয় ব্যবসায়ীরা সহস্রাধিক খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তুলছেন। এতে আশপাশের সহস্রাধিক বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, সেতু, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাঙনের হুমকির মুখে পড়ছে। অথচ বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ৪-এর খ ধারায় উল্লেখ আছে—সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্য থেকে বালু তোলা যাবে না।

ঘাটটিতে আপাতত বালু তোলা বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফারজানা খানম, ইউএনও, দুর্গাপুর

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার দুপুরে ১ নম্বর ঘাটের দেবথৈল এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নারায়ণ চন্দ্র বর্মণের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। আদালত অবৈধভাবে বালু তোলার দায়ে ১৫টি খননযন্ত্র ধ্বংস করেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে আদালতের ওপর বালু ব্যবসায়ী ও তাঁদের লোকজন হামলা চালায়। এতে আদালতের সঙ্গে যুক্ত দুর্গাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রোকন উদ্দিন, কনস্টেবল মো. রুবেল মিয়া ও মো. খলিল, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. এরশাদুল ইসলাম ও মো. নজরুল ইসলাম এবং শ্রমিক মো. রফিক আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রশাসন আরও জানায়, হামলাকারীরা ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যবহৃত সরকারি একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে ইউএনও ফারজানা খানমের নেতৃত্বে পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তখন হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে অভিযান চালিয়ে আরও অন্তত ৩৫টি খননযন্ত্র ভেঙে দেওয়া হয়। হামলার ঘটনায় হওয়া মামলায় সরকারি কাজে বাধা, হামলা, ক্ষতিসাধন, সরকারি আদেশ অমান্য, গাড়ি ভাঙচুর ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছে।

ইউএনও ফারজানা খানম বলেন, ঘাটটিতে আপাতত বালু তোলা বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।