ভয়কে জয় করেছি ওবায়দুল কাদেরের সহযোগিতায়

আবদুল কাদের মির্জা
ফাইল ছবি
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী ‘সত্যবচনে’ আলোচিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা এখন অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত। তিনি এই বিজয়ের পেছনে করোনাকালে এলাকার মানুষের পাশে থাকা এবং তাঁর বড় ভাই সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হাত ধরে হওয়া ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন। তিনি আজ রোববার সকালে মুঠোফোনে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচনের আগে দেওয়া নানা বক্তব্য, এখনকার পরিস্থিতি, এসব নিয়ে কথা বলেন।
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি তো অনেক বেশি সফল হলেন। কীভাবে এতটা সফল হলেন? আপনার কাছে কী মনে হয়?

আবদুল কাদের মির্জা: আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায়, আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের আন্তরিকতায় প্রচুর উন্নয়ন করেছি। তা ছাড়া করোনার সময় পাহাড়ের মতো ছিলাম। তারপরও আমি অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি, আমি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। এসব কারণ মিলেই মূলত মানুষ আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে এবং আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি যেভাবে আশঙ্কা করেছিলেন—নোয়াখালী, ফেনী থেকে অস্ত্র আসছে, আমরাও তো ভয়ে ছিলাম। কিন্তু ভোট তো শেষ পর্যন্ত ভালোই হলো?

আবদুল কাদের মির্জা: ভয়কে আমি জয় করেছি আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেবের সহযোগিতায়। ওনার সহযোগিতায় আমি ভয়কে জয় করেছি, এটা হলো আমার সংক্ষিপ্ত কথা।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: তাহলে আপনি যে অভিযোগগুলো করেছেন, সেগুলো কি অনুমানের ভিত্তিতে? নাকি কোনো বাস্তবতা ছিল?

আবদুল কাদের মির্জা: তথ্য আমার কাছে ছিল। কিন্তু আমি বলছি, ওবায়দুল কাদের সাহেবের সহযোগিতায়। একটা কথাই বললাম আপাতত। বাকি কথা পরে বলব।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: তাহলে যে অস্ত্রগুলো এসেছে, সেগুলো কোথায়? সেগুলো উদ্ধারে আপনি কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না? এ বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য বা দাবি আছে কি না?

আবদুল কাদের মির্জা: এগুলো প্রশাসনের দায়িত্ব। আমি ওনাদের বলেছি, এখানে জামায়াতে ইসলামীর লোকজন পুলিশের ওপর গুলি করেছে। ১২টি সরকারি অফিস ভাঙচুর করেছে। পুলিশকে গুলি করেছে। তাদের অস্ত্রটা এখনো বাইরে আছে। তারপর এখানে বিএনপির দুটি ছেলে গত উপজেলা নির্বাচনের আগের উপজেলা নির্বাচনে গুলি করেছে বসুরহাট হাইস্কুল কেন্দ্রে। আমি এই দুটি বিষয়ে তাদের দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলব। আমরা সবাই অস্ত্রের রাজনীতি ঐক্যবদ্ধভাবে পরিহার করব।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: প্রশাসনের ভূমিকা কেমন ছিল? প্রশাসন নাকি আপনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল? আপনি বলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আপনার পাশে নেই। এত প্রতিকূল অবস্থায় আপনি বিপুল ভোটে জিতলেন। তাহলে ভোট কি বিএনপি, জামায়াতের লোকেরা দিয়েছেন?

আবদুল কাদের মির্জা: সব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করেছি জননেতা ওবায়দুল কাদের সাহেবের সহযোগিতায়। বিএনপি-জামায়াতের সাধারণ ভোটগুলো আমি পেয়েছি, না হলে আমি এত ভোট পেতাম না। এখানে তো বিএনপির অবস্থান একসময় সুদৃঢ় ছিল। এটা আসলে আমাদের কর্মকাণ্ডে, বিশেষ করে ওবায়দুল কাদের সাহেবের উন্নয়নের কারণে হয়েছে; এটা হচ্ছে মূল বিষয়।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি তো মেয়র হয়ে গেলেন। এখন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়োগ–বাণিজ্য—এগুলো নিয়ে খোলাসা করে বলবেন, কারা করে? এগুলো প্রতিরোধে আপনি কী ভূমিকা নেবেন?

আবদুল কাদের মির্জা: এটা জাতীয়ভাবে আমাদের নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে। ওনারা আমাকে বলেছেন, এই বিষয়গুলো দেখবেন। আমি অপেক্ষা করছি ওনারা কী করেন। না হলে আমি সব খোলাসা করব প্রমাণসহ।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নির্বাচিত হওয়ার পর আপনাকে প্রথম অভিনন্দন কে জানিয়েছেন? আপনার বড় ভাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, না অন্য কেউ? আপনার ভাবির বিরুদ্ধে আপনার অনেক অভিযোগ ছিল, তিনি কি আপনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন?

আবদুল কাদের মির্জা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব আমাকে প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছেন। আসলে ভাবির বিরুদ্ধে সে রকম কোনো অভিযোগ নেই। বিগত উপজেলা নির্বাচনের সময় তিনি একজনের পক্ষে ছিলেন, আমি অপরাজনীতির কারণে তাঁর বিপক্ষে ছিলাম। আমি একজনের পক্ষে ছিলাম, তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন, এটাই। এখানে অন্য কোনো বিষয় নেই।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নির্বাচনের আগের যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, বিশেষ করে নিজের দলের বিরুদ্ধে, ভাইয়ের বিরুদ্ধে, এটা কি আপনি নির্বাচনে জেতার কৌশল হিসেবে নিয়েছেন?

আবদুল কাদের মির্জা: আমি যেটা সত্য, সেটা বলেছি। আমি তো আপনাকে বললাম, আজকে কেন্দ্রীয় নেতারা দায়িত্ব নিয়েছেন, অপরাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় উনারা দেখবেন। আমরা অপেক্ষায় আছি। আমি যে কথাগুলো বলেছি, যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন না আসবে, আমি দলের জন্য বলেছি। আরও তিন বছর দলের ক্ষমতা আছে। এই তিন বছর পর আমাদের একটি নির্বাচনের মুখোমুখি হবে; সে ক্ষেত্রে আমরা ভালো ফল করতে পারব, এমন পরিবেশ আমি অন্তত বৃহত্তর নোয়াখালীতে দেখছি না। এটা হলো বাস্তবতা। বাংলাদেশের অন্য জায়গা সম্পর্কে আমার কাছে কোনো ধারণা নেই। আমি বৃহত্তর নোয়াখালীর কথা বলব, এখানে তিন-চারটা আসনে সম্ভাবনা আছে, আর কোনো আসনেই আওয়ামী লীগ জিতবে না, যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হয়।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: পৌরসভার বাসিন্দাদের নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

আবদুল কাদের মির্জা: আমি নির্বাচনের আগে তাঁদের কাছে যেসব ওয়াদা করেছি, সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই, সেই ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া গ্যাসের সমস্যা রয়েছে। অনেক বাসা-বাড়িতে গ্যাস পৌঁছায়নি। মন্ত্রী মহোদয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন গ্যাসের সমস্যার সমাধান করবেন।