মজুত শেষ হওয়ায় বাগেরহাটের ছয় উপজেলায় টিকাদান বন্ধ

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ভারতে উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট
ছবি: এএফপি

বাগেরহাটে শূন্যে পৌঁছেছে করোনাভাইরাসের টিকার মজুত। ফলে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সদরসহ ছয়টি উপজেলায় করোনার টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ আছে। আজ সারাদিন টিকাদানের পর দুটি উপজেলার মজুত শেষ হয়ে গেছে। শুধু মোল্লাহাটে কিছু ডোজ করোনার টিকা রয়েছে।

এমন অবস্থায় টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন জেলার ২২ হাজার মানুষ। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, মজুত শেষ হলেও দু-এক দিনের মধ্যে ৮ হাজার ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। যা দিয়ে ঈদ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান চালিয়ে নেওয়া হবে।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত বাগেরহাটে টিকা পাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৮৫ হাজার ২১০ জন। তাঁদের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৭৮৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৫ হাজার ৯৭ জন আর নারী ১৯ হাজার ৬৮৭ জন। আর দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন ৩২ হাজার ৩৭২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২১ হাজার ৫০২ জন আর নারী ১০ হাজার ৮৭০ জন।

টিকার মজুত শেষ হলেও আমরা আজকালের মধ্যে ৮ হাজার ডোজ টিকা পাচ্ছি। যা দিয়ে আমরা আশা করছি ঈদ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান চালিয়ে নিতে পারব।
কে এম হুমায়ুন কবির, সিভিল সার্জন, বাগেরহাট

৩ ফেব্রুয়ারি জেলায় প্রথম ধাপে ৪৮ হাজার ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা আসে। এরপর ১১ মার্চ ৫ হাজার, ২৪ মার্চ ২ হাজার ডোজ টিকা আসে। আর চলতি এপ্রিল মাসের ৭ তারিখে আসে ৩৬ হাজার ডোজ টিকা। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের জন্য আসা এই টিকা শেষ হওয়ায় প্রথম ডোজ নেওয়া ২২ হাজার ৪১২ জনের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আর নিবন্ধন করে টিকার কোনো ডোজই দিতে পারেনি জেলায়, এমন মানুষের সংখ্যা ৩০ হাজার ৪২৬ জন।

টিকা শেষ হওয়ায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে এসেই বাগেরহাট সদর হসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হয়েছে অনেককে। তবে মোল্লাহাট, মোংলা ও রামপাল উপজেলাতে সামন্য মজুত থাকায় আজও এই উপজেলাগুলোতে টিকাদান কার্যক্রম চলেছে বলে জানায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। দিনশেষে মোল্লাহাট ছাড়া সবখানেই টিকার মজুত ফুরিয়ে গেছে।

আজ বৃহস্পতিবার যাত্রাপুর এলাকা থেকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে টিকা নিতে আসা অবন্তী দাস বলেন, ‘করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা ছিল। হাসপাতালে এসে দেখি, টিকাদান কক্ষে কেউ নেই। রেড ক্রিসেন্টের একটা ছেলে বলল টিকা শেষ।’ দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসা আলিমুজ্জামান বলেন, ‘আজকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার তারিখ ছিল। টিকা শেষ তা আগে জানতে পারলে এসে ফিরে যাওয়া লাগত না।’

টিকা নিতে এসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও ফিরে গেছেন অনেকে। এসএমএস না পেয়ে অনেকে ধরণা দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) প্রথম আলোকে বলেন, টিকার মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় নিতে আসার জন্য নিবন্ধনকারীদের এমএমএস দেওয়া বন্ধ আছে। তবে তারপরও অনেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছেন।

টিকা কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বাংলাদেশে শুরু থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে এই টিকার উৎপাদন হয়েছে। তবে ভারতের করোনা সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করায় নিজেদের চাহিদা বিবেচনা করে ভারত আপাতত টিকা রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। চলমান কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার জন্য অন্য দেশের টিকা আমদানির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে সরকার।

টিকার বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এই টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বাগেরহাট এখন পর্যন্ত দেশের একমাত্র জেলা, যারা প্রাপ্ত ভ্যাকসিনের শতভাগ কনজিউম (প্রয়োগ) করতে পেরেছে। টিকার মজুত শেষ হলেও আমরা আজকালের মধ্যে ৮ হাজার ডোজ টিকা পাচ্ছি। যা দিয়ে আমরা আশা করছি ঈদ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান চালিয়ে নিতে পারব।’

সিভিল সার্জন বলেন, প্রথম ডোজ নেওয়ার ১২ সপ্তাহের মধ্যে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। আশা করছেন, ঈদের আগে আরও টিকা হাতে পাবেন। প্রথম ডোজের টিকা প্রদান এখন বন্ধ আছে। ফলে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ প্রদান করা সম্ভব হবে।