মণিপুরি শাড়ির কদর কমেনি

নকশা ও বৈচিত্র্যের কারণে মণিপুরি পোশাকের প্রতি পর্যটকদের আলাদা ঝোঁক রয়েছে। সিলেট নগরের শিবগঞ্জ এলাকায় মণিপুরি তাঁতশিল্প প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

দেশে মণিপুরি শাড়ি কিংবা কাপড়ের নাম শোনেননি, এমন নারীর সংখ্যা কমই হবে। সিলেটে ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে মণিপুরি কাপড়। মণিপুরি সম্প্রদায়ের বসবাসও সিলেট বিভাগের চার জেলাজুড়ে। আগে নিজেদের মধ্যে এসব কাপড়ের চাহিদা থাকলেও এখন সিলেটে পর্যটকদের আকর্ষণ ও ঝোঁক রয়েছে মণিপুরি কাপড়ের প্রতি। সিলেটে বেড়াতে এসে অনেকেই এসব কাপড় কিনতে ভোলেন না। এ ছাড়া সারা দেশেই এ কাপড়ের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। মণিপুরি কাপড় তৈরি করেন নিজ সম্প্রদায়ের তাঁতশিল্পীরা।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, নকশা ও বৈচিত্র্যের কারণে মণিপুরি পোশাকের প্রতি পর্যটকদের আলাদা ঝোঁক রয়েছে। চাহিদা থাকায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোর আশপাশে বিভিন্ন বিপণিবিতানের বিক্রেতারাও পর্যটকদের জন্য মণিপুরি কাপড় সংগ্রহ করে রাখেন।

মণিপুরি তাঁতশিল্পী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মণিপুরি কাপড়গুলোর মধ্যে বিশেষ করে শাড়ি, ওড়না, চাদর, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, গামছা, বিছানা চাদর, থ্রি-পিস ও মাফলারের চাহিদাই বেশি। এসব পোশাকের মধ্যে বেশির ভাগই তৈরি হয় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায়। বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মণিপুরি সম্প্রদায়ের মানুষের বাস জেলার উপজেলাটিতে। সেখানে প্রায় প্রতিটি ঘরেই ছোট-বড় কাপড়ের তাঁত কিংবা কোমর তাঁতে কাপড় বোনেন মণিপুরি নারীরা। এ ছাড়া সিলেটের মণিপুরি তাঁতিরাও কাপড় বোনেন।

সিলেট নগরের লামাবাজার এলাকার মণিপুরি কাপড়ের এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে পর্যটক কম ছিল দীর্ঘদিন। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পথে। এখন বিক্রি হচ্ছে মোটামুটি। সাধারণত পর্যটকদের কেন্দ্র করেই এসব কাপড় বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসব উপল‌ক্ষে বিক্রি হয়ে থাকে এসব মণিপুরি কাপড়। এর মধ্যে শড়ি, থ্রি–পিস, ওড়না, গামছা ও পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হয়। এ ছাড়া শীতের মৌসুমে চাহিদা বাড়ে চাদর ও বিছানা চাদরের।

মণিপুরি নারীদের প্রায় ৯০ শতাংশ জন্মসূত্রেই তাঁতশিল্পের সঙ্গে পরিচিত। প্রথম দিকে নিজেদের জন্য কাপড় বুনলেও পর্যায়ক্রমে সেটি বাণিজ্যিকভাবে রূপ নেয়
ছবি: প্রথম আলো

কমলগঞ্জের হোমেরজান গ্রামের বাসিন্দা এল নন্দিতা দেবী বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে টুকটাক কাপড় বানাতাম। করোনা পরিস্থিতিতে বাড়িতেই বসে থাকতে হয়েছে। সে সময় কঠিন দুঃসময় পার করতে হয়েছে। তাই অনেক ব্যবসায়ী কম মূল্যে কাপড় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, একধরনের বিনা মজুরিতেই সুতার দাম ধরেই অনেকে কাপড় বিক্রি করেছেন। তবে দুঃসময় কাটিয়ে উঠেছেন তাঁতিরা। বর্তমানে অনেক তাঁতি নিজেই সরাসরি কাপড় বিক্রি করছেন ক্রেতার কাছে। অবশ্য এর জন্য অনলাইনের বাজারকেই ধন্যবাদ দিতে হয়।

মণিপুরি যুব সমিতির সভাপতি ধীরেন সিংহ বলেন, ‘মণিপুরিদের হাতে তৈরি তাঁতশিল্পের সুনাম থাকলেও এখন অনেকেই সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং তাঁতশিল্পীদের কম পারিশ্রমিক দিয়ে ব্যবসায়ীরা লাভবান হওয়ায় শিল্পীরা এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তরুণেরাও এ পেশায় না আসার অন্যতম একটি কারণ। কিন্তু মণিপুরি নারীদের প্রায় ৯০ শতাংশ জন্মসূত্রেই তাঁতশিল্পের সঙ্গে পরিচিত। প্রথম দিকে নিজেদের জন্য কাপড় বুনলেও পর্যায়ক্রমে সেটি বাণিজ্যিকভাবে রূপ নেয়। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও প্রচুর পরিমাণে মণিপুরি কাপড় বাজারজাত করা সম্ভব।