মতলব উত্তরে ৫০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ বন্ধ

বৃষ্টিপাতের ফলে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। মতলব উত্তর, চাঁদপুরপ্রথম আলো

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় বৃষ্টিপাতের ফলে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। জলাবদ্ধতা দূর না হওয়ায় চলতি মৌসুমে সেখানকার ৫০০ হেক্টর কৃষিজমিতে আমন ধানের আবাদ বন্ধ রয়েছে। এতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

চাষিদের অভিযোগ, জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে আমনের আবাদ শুরু হয়। এ মাসেই আবাদের সময় শেষ হবে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও চাঁদপুর পাউবো সূত্র জানায়, ১৯৮৮ সালে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি নির্মিত হয়। বেড়িবাঁধের ভেতরে কৃষিজমির পরিমাণ ১৫ হাজার হেক্টরের কিছু বেশি। এর মধ্যে সেচযোগ্য কৃষিজমি ৮ হাজার হেক্টর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে গত মৌসুমে প্রায় ২ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে আউশের আবাদ হয়নি। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আমন আবাদের চলতি মৌসুম শুরু হয়। এই মৌসুমে সেখানে ৮ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূর না হওয়ায় এবার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ বন্ধ রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাঁদপুর পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

গত সোমবার দুপুরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতর ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার গজরা, ছৈয়ালকান্দি, উত্তর লুধুয়া, বড় ও ছোট হলদিয়া, ঠাকুরচর, ফরাজীকান্দি, নাউরী, ফতেপুর, মান্দারতলী, ঠেটালিয়া, সিপাইকান্দিসহ আরও কয়েকটি এলাকার বেশ কিছু নিচু জমি ও বিলে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার জলাবদ্ধতা রয়েছে। এসব জমিতে শোভা পাচ্ছে আগাছা, শাপলা ও শেওলা। আটকে থাকা পানি দূর না হওয়ায় সেখানে আমনের আবাদ হচ্ছে না। ওই জলাবদ্ধতা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায়নি।

উপজেলার ফতেপুর এলাকার ধানচাষি মো. মাসুদ মিয়া বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় গেল মৌসুমে আমার তিনডা জমিতে আউশ লাগাইতে পারি নাই। মনে করছিলাম, জমির পানি কমলে আমনের চারা লাগাইতে পারুম। কিন্তু এহন পর্যন্ত জমি থেইক্কা পানি সরে নাই। এত পানির মধ্যে ধানের আবাদ করুম ক্যামনে। ধান লাগানোর সময়ও শেষ হইয়া যাইতাছে। আবাদ করতে না পারলে ধানও ঘরে আইব না। ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী, পরিজন নিয়া খামু কী? সংসারের খরচ চলব ক্যামনে। কর্জের টেয়াও পরিশোধ করতে পারুম না। এলিগা খুবই দুশ্চিন্তা ও হতাশায় আছি। পানি সরানোর লইগা হেগো (পাউবো) বহুবার কইছি। কাম অইতাছে না।’

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ফতেপুর, ঠেটালিয়া ও সিপাইকান্দি এলাকার পানি ব্যবহারকারী দলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী অভিযোগ করেন, বেড়িবাঁধের ভেতরে স্থানীয় লোকজন অবৈধভাবে অনেক সেচ ও পানিনিষ্কাশন খাল দখল করে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন স্থাপনা বানিয়েছেন। এতে সেখানকার নিচু জমি ও বিলের পানিনিষ্কাশন খালে পৌঁছাতে পারছে না। বছরের পর বছর সেখানে স্থায়ী জলাবদ্ধতা লেগেই আছে। চাষিরাও আবাদ করতে পারছেন না ফসল। প্রতিবছর ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। বিষয়টি পাউবোকে একাধিকবার জানিয়েও কাজ হচ্ছে না। জলাবদ্ধতা নিরসন ও খালের স্থাপনা, বাড়ি ও রাস্তাঘাট উচ্ছেদে কার্যকর পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে না।

জানতে চাইলে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের দায়িত্বরত চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্স-এন) মামুন হাওলাদার বলেন, বেড়িবাঁধটির ভেতরে যেসব জমিতে এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে, তা দূর করার জন্য দুটি পাম্প হাউস কাজ করছে। তবে অনেক খাল বেদখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় আটকে থাকা পানি প্রধান খালে আসতে পারছে না। দূর হচ্ছে না জলাবদ্ধতাও। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে শিগগির অভিযান চালানো হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।