মতলব দক্ষিণে মাধ্যমিকে ক্লাসে ফেরেনি চার হাজারের বেশি শিক্ষার্থী

ফাইল ছবি

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪ হাজার ২৬৮ শিক্ষার্থী ক্লাসে ফেরেনি। করোনাকালের অর্থসংকট ও বাল্যবিবাহের মতো নানা কারণে এসব শিক্ষার্থী ক্লাসে ফেরেনি বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এই উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে উচ্চবিদ্যালয় ২৯টি। এগুলোয় গত জানুয়ারিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি ও উত্তীর্ণ হয় ১৪ হাজার ৮০৯ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করে ৩ হাজার ১০২ জন। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি হওয়া এবং এসএসসির ফরম পূরণ করা মোট শিক্ষার্থী ১৭ হাজার ৯১১ জন।

সূত্রটি জানায়, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। ওই সময় থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির এবং এসএসসির ফরম পূরণ করা শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাস করছে ১৩ হাজার ৬৪৩ জন। ৪ হাজার ২৬৮ শিক্ষার্থী এখনো ক্লাসে ফেরেনি।

এসব বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮০৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাসে ফিরেছে ১১ হাজার ২৫৪ জন। ফেরেনি ৩ হাজার ৫৫৫ জন। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির ৭০৫, সপ্তম শ্রেণির ৭৫৮, অষ্টম শ্রেণির ৭৭৫, নবম শ্রেণির ৬৬৪ ও দশম শ্রেণির ৬৫৩ শিক্ষার্থী ক্লাসে ফেরেনি। এ ছাড়া অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করা ৭১৩ শিক্ষার্থী ক্লাস করছে না। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ওই ২৯ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ছিল ১৬ হাজার ৭৩৭ জন। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৪৮৫ জন।

উপজেলার মতলব জেবি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিসান প্রধান বলে, ‘এবার এসএসসি দেওয়ার কথা থাকলেও ফরম পূরণ করি নাই। অভাবের লইগা লেহাপড়া ছাইড়া ঢাকায় কাম লইছি।’ উপজেলার উদ্দমদী গ্রামের দিনমজুর মফিজুল ইসলাম প্রধান বলেন, তাঁর ছেলে ১০ম শ্রেণিতে পড়ত। করোনার কারণে তাঁর আয় কমে যায়। অর্থাভাবে ছেলেকে লেখাপড়া করাতে পারছেন না। সে এখন টুকটাক কাজ করছে।

উপজেলার নারায়ণপুর পপুলার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ক্লাসে আসার জন্য সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এরপরও অনেকে ক্লাসে আসছে না। করোনা ভীতি, অর্থসংকট ও দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা তৈরি হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। করোনাকালে বেশ কিছু ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হওয়ায় তাঁরাও ঝরে পড়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুর রহিম খান বলেন, সব শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। শিক্ষকেরাও এ ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরপরও অনেকে ক্লাসে আসছে না। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। করোনাকালে মাধ্যমিক পর্যায়ে কত ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর সঠিক পরিসংখ্যান তাঁর জানা নেই। তবে বাল্যবিবাহের কারণে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।