মধুর মতো মিষ্টি তরমুজ ‘হানিডিউ’ চাষে জাহিদুলের সাফল্য

সিরাজগঞ্জের জাহিদুল হানিডিউ তরমুজ চাষে সাফল্য পেয়েছেন
প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শাহানগাছা এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিলন। বাংলাদেশে অপ্রচলিত এমন বিদেশি সবজি ও ফল চাষাবাদে তাঁর বেশ আগ্রহ। গড়ে তুলেছেন নিজের প্রতিষ্ঠান ফার্মডেস্ক এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ। তাঁর চাষাবাদের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ‘হানিডিউ’ তরমুজ। মধুর মতো মিষ্টি ফলটি ইতিমধ্যে স্থানীয় ক্রেতাদের মন কেড়েছে।

দেশীয় তরমুজের তুলনায় অনেক বেশি মিষ্টি। স্বাদেও ভিন্ন। ফলে, ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হানিডিউ তরমুজ। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পরে গাঢ় হলুদ রঙের হয়। ভেতরটাও হলুদ।

জাহিদুল জানালেন, ২০১৬ সালে নিজের কেনা কিছু জমি আর লিজ নেওয়া জমি মিলে সাড়ে চার বিঘা জমিতে শুরু করেন অপ্রচলিত ফসলের চাষ। শুরুতে ক্যাপসিকাম, লেটুসপাতা আর শসার চাষ করেন তিনি। ২০১৯ সালে দুই হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি বিশেষ ঘরে শুরু করেন হানিডিউ তরমুজের চাষ। প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পরীক্ষামূলক এই ফল চাষ করার জন্য অবকাঠামো তৈরি করেন তিনি। ওই বছর বিক্রি করেন সাড়ে তিন লাখ টাকার তরমুজ। ২০২০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো চাষ করেছেন এই ফলের।

নতুন ধরনের এই ফলের চাষাবাদের কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে জাহিদুল বলেন, মাটি ছাড়া নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি করা কোকোপিটের বস্তায় বেড়ে ওঠে এই তরমুজগাছ। বিশেষ তাপমাত্রায় ঘরের মধ্যে হয় বলে সারা বছরই এই তরমুজ পাওয়া সম্ভব। তাঁর খামারে তরমুজগাছ আছে ৬৪০টি। প্রতিটি গাছে একাধিক ফল ধরে। একেকটি ফলের ওজন ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি হিসাবে ৩০০ টাকায় এবং খুচরা হিসাবে বাজারে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।

হানিডিউ তরমুজ চাষাবাদের সাফল্য নিয়ে আশাবাদী জাহিদুল। তিনি বলেন, গাছ লাগানোর দুই মাসের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। দেশীয় তরমুজের তুলনায় অনেক বেশি মিষ্টি। স্বাদেও ভিন্ন। ফলে, ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হানিডিউ তরমুজ। আকারে দেশীয় তরমুজের চেয়ে অনেকটাই ছোট এবং রং গাঢ় হলুদ। ভেতরটাও হলুদ। তবে কাঁচা অবস্থায় ফলের বাইরেরটা সবুজ রঙের থাকে।

জাহিদুলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই ভাই আর তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট জাহিদুল। ছোটবেলা থেকেই একটু ব্যতিক্রমী চিন্তা আর কাজের জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। স্থানীয় বাহুকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে এসএসসি ও ১৯৯৮ সালে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে চলে যান নারায়ণগঞ্জে। সেখানকার তোলারাম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। ২০০৫ সালে তিনি আউটসোর্সিংয়ের কাজে যুক্ত হন। শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওই কাজ ছেড়ে দেন। একসময় মন দেন ভিন্ন ধরনের সবজি ও ফল চাষাবাদে।

জাহিদুল জানালেন, এই তরমুজ কিনতে প্রতিদিনই তাঁর ফার্মে লোকজন আসেন। অনেকে তাঁর উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তবে দু-একজন যে নিরুৎসাহিত করেন, সেটাও বললেন তিনি। এই তরমুজের একজন ক্রেতা সিরাজগঞ্জ শহরের প্রণমী সাহা। তিনি বলেন, ভিন্ন ধরন আর স্বাদের তরমুজটি তাঁর বেশ ভালো লেগেছে। একই ভাষ্য রায়গঞ্জ উপজেলার আবু রায়হানের। তিনি বলেন, এই তরমুজ খেতে অনেক মিষ্টি।

ছোট অবস্থায় হানিডিউ তরমুজ সবুজ রঙের থাকে
প্রথম আলো

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রুস্তম আলী বলেন, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ করে সিরাজগঞ্জের জাহিদুল ইসলাম ভিন্ন স্বাদের বিদেশি ফল খাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। তাঁর এ উদ্যোগ সফল হলে আরও অনেকে এই ফলের চাষাবাদ করবেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপপরিচালক আবু হানিফ উদ্যোগের প্রশংসা করে প্রথম আলোকে বলেন, নতুন কিছু করতে গেলে অনেক সমস্যা হয়। সেসব সমস্যা পেছনে ফেলেই এগিয়ে যেতে হয়। জাহিদুল আরও এগিয়ে যাবেন বলে তিনি আশাবাদী।