মধ্যবিত্তদের ওএমএসের লাইনে এনেছে মূল্যবৃদ্ধি

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান স্থানীয় বাজার থেকেই নিত্যদিনের পণ্য কিনতেন। তবে গত এক সপ্তাহে বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তিনি ওএমএসের (খোলাবাজারে বিক্রি) দোকান থেকে পণ্য কিনছেন। সেখানে স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য কিছুটা কম দামে কিনতে পাওয়া যায়।

গত রোববার সদর উপজেলার কলেজপাড়ার গোবিন্দনগর এলাকায় শাহিনুরের মতো বেশ কয়েকজনকে ওএমএসের দোকান থেকে পণ্য কিনতে দেখা যায়। যাঁরা গত সপ্তাহেও নিয়মিত স্থানীয় বাজারে গিয়ে পণ্য কিনতেন। ওএমএসের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়াতে চাইতেন না। কিন্তু এখন আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখতে সে অভ্যাস বদলাতে হচ্ছে তাঁদের।

জেলার স্থানীয় বাজারগুলোয় গত সপ্তাহে চাল, ডাল, আটা ও তেলের যে দাম ছিল তা চলতি সপ্তাহে এসে প্রতি কেজি ৫ থেকে ১০ টাকার বেশি বেড়ে গেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা। তাই ব্যয় কিছুটা হলেও সাশ্রয় করতে ওএমএসের দোকান দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন তাঁরা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও পৌর শহরে ২৪ জন পরিবেশকের মাধ্যমে প্রতিদিন ৬ টন করে চাল ও আটা বিতরণ করা হচ্ছে। ক্রেতারা পরিবেশকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি আটা ১৮ ও চাল ৩০ টাকা দরে কিনতে পারছেন।

এদিকে গত রোববার পৌর শহরের কালীবাড়ি বাজার, রোড বাজার, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড বাজারে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৪, মিনিকেট ৬০ থেকে ৬২ আর আটা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। মাছ, মাংস, ডিমসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও ছিল বেশ চড়া।

গত সপ্তাহের সঙ্গে চলতি সপ্তাহের পণ্যের দাম তুলনা করে দেখা যায়, ৫৮ থেকে ৬০ টাকার মিনিকেট চাল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকায়। সবচেয়ে বেশি ৬০ টাকা বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ২০ টাকা। ৩০ টাকা বেড়েছে খোলা শর্ষের তেলের দাম। ১০ টাকা করে দাম বেড়েছে প্যাকেটজাত চিনি ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের। তবে গরু, খাসি ও দেশি মুরগির মাংসের দাম স্থিতিশীল আছে।

শহরের হলপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ফেরদৌসী বেগম বলেন, বাজারে চাল, তেলসহ সবকিছুরই দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় সীমিত আয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই ওএমএসের দোকান থেকে চাল-আটা কিনতে শুরু করেছেন তিনি। এতে কিছুটা হলেও সাশ্রয় হচ্ছে।

তবে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পরিবেশক মৃত্যুঞ্জয় দের প্রতিনিধি মোহাম্মদ দুলাল বলেন, এলাকার অনেকেই খোলাবাজারের আটা-চাল কিনতে শুরু করায় চাহিদা বেড়েছে। দৈনিক যে ২৫০ কেজি করে আটা-চাল বরাদ্দ পাওয়া যায়, তা অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। জনপ্রতি পাঁচ কেজি করে চাল-আটা দেওয়ার কথা থাকলেও দুই-তিন কেজির বেশি করে দিতে পারছেন না।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম গত রোববার বলেন, চাহিদা থাকলেও এ অবস্থায় ওএমএসের দোকানের বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ নেই।