মরা গাছে বড় বিপদ

বিভিন্ন হাটবাজারে মরা গাছ দাঁড়িয়ে আছে। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি বাজারের গরুর হাঠে
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির বার্ষিক বনভোজন ছিল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। বনভোজন শেষে সন্ধ্যার পর ওই বাজারের গরু হাটের স্থানে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে থাকা মরা একটি আমগাছ রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে ভেঙে পড়ে। এতে বেশ কয়েকজন দর্শক আহত হন। তাঁদের নেওয়া হয় ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে নাসির উদ্দিন নামের একজনকে মৃত ঘোষণ করেন চিকিৎসক। মো. শহিদ নামের আরেকজন পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

এর আগেও ভালুকায় মরা গাছ ভেঙে পড়ে এমন হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কালবৈশাখীর এ সময়ে এমন দুর্ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। তাই মরা গাছগুলো সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান তাঁদের।

নাসির ও শহিদের জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন এলাকার রাজনীতিক এবং মল্লিকবাড়ি বাজার সমিতির নেতারা। তাঁরা পরিবার দুটিকে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও কোনো সহযোগিতা পাননি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার দুটির সদস্যরা।

সম্প্রতি নাসির ও শহিদের বাড়িতে গিয়ে লক্ষ করা যায় নীরবতা। দুজনই ছিলেন পরিবার দুটির রুটি–রুজির ভরসা। তাঁদের মৃত্যুতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন পরিবারের অন্যরা। নাসির এবং শহিদ দুজনই ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। যেদিন তাঁরা মারা যান, সেদিনও ঘরে রান্না করার মতো চাল ছিল না। প্রতিবেশীরা বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ৫০ কেজি চাল, দুই কেজি সয়াবিন তেল, তিন কেজি ডাল কিনে দেন। নাসিরের একমাত্র মেয়ে খাদিজা স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বই কেনার টাকার অভাবে তার পড়ালেখা বন্ধ হতে চলেছে।

নাসিরের স্ত্রী নূরজাহান বেগম প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন নাসির। কাঠমিস্ত্রির কাজ করে যা উপার্জন করতেন, তা দিয়ে কোনোমতে চলত সংসার। এখন তিনি (নূরজাহান) ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। হাতে নেই কোনো অর্থকড়ি। মা–বাবা, ভাইবোন কেউ নেই। ফলে সামনে কী হবে, তা ভেবে কিনারা পাচ্ছেন না তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল খালেক বলেন, নূরজাহানের জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ কারণে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

ওদিকে শহিদের পরিবারেও একই অবস্থা। বাড়িতে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়েটা পড়ে শহিদ নাজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে। ছোট মেয়ের বয়স ১৫ মাস। একমাত্র ছেলে স্থানীয় হাফেজি মাদ্রাসায় পড়ে।

শহিদের স্ত্রী শাহনাজ প্রথম আলোকে বলেন, শহিদের মৃত্যুর দিনও ঘরে রান্নার চাল ছিল না। চাল কেনার জন্যই বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। পরে ফিরেছেন নিথর দেহ নিয়ে। পরিবারটির অসহায়ত্ব দেখে স্থানীয় ইউপি সদস্য শামসুল হক একদিন তাঁদের ১০ টাকা কেজি দরের ৩০ কেজি চাল দিয়েছেন।

মরা গাছ নিয়ে আতঙ্ক

উপজেলার কয়েকটি বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় সবখানেই মরা গাছ দাঁড়িয়ে আছে। সরকারি জায়গায় থাকায় এসব গাছ কেটে ফেলার সুযোগ নেই এলাকাবাসীর। মল্লিকবাড়ি বাজারের ভিমবাবুর মুদির দোকানের ওপরে দুটি আমগাছ, গরুর বাজারে তিনটি রেইনট্রি, দুটি আমগাছ, ইদ্রিস মোড়লের হোটেলের ওপরে একটি আমগাছ, কাঁচা বাজারে বারেক ডিলারের ঘরের এপর একটি রেইনট্রি, মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের ভূমি কার্যালয়ের কাছে দুটি কাঁঠাল ও সেগুনগাছ, কাচিনা ইউনিয়নের আঙ্গারগাড়া বাজারের গরুর হাটে পাঁচটি কাঁঠাল, উথুরা ইউনিয়নের মাছবাজারের টিনশেডের ওপর একটি রেইনট্রিগাছ মরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

এসব বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মরা গাছ নাজুক অবস্থায় থাকে। ফলে সামান্য বাতাসেও ভেঙে পড়তে পারে। আর এখন কালবৈশাখীর সময়। এসব মরা গাছ না সরালে ঝড়ে ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। উথুরা বাজারের ইজারাদার রবিউল আলম বলেন, মরা গাছ সরিয়ে নিতে তাঁরা উপজেলা প্রশাসনকে মৌখিকভাবে অনুরোধ করেছেন।

ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা খাতুন বলেন, উপজেলার হাটবাজারের মরা গাছের তালিকা তৈরি করতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এসব গাছ কেটে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।