‘মরি–বাঁচি, বাবা-মা ছাড়া ঈদ করমু না’

ভোগান্তি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাস–মাইক্রোবাসে করে বাড়ি ফিরছেন অনেকে
দিনার মাহমুদ

ঢাকার ডেমরা এলাকার একটি হোশিয়ারি কারখানার শ্রমিক ইয়াসমিন আরা (২৭)। আজ সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় ছোট বোন জেসমিন আরার (২৩) সঙ্গে অপেক্ষা করছিলেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় এলাকায়। ফেনীর দাগনভূঞায় মা–বাবার সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন তাঁরা।

অন্যান্য বছর ঈদে বাড়ি ফেরার পথে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়ায় শিমরাইল থেকে দাগনভূঞার সরাসরি বাস ধরতেন ইয়াসমিন। এ বছর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগেই জেনে এসেছেন এবারের ঈদযাত্রা ততটা সহজ হবে না। শিমরাইল মোড়ে এসে ভাবনার সঙ্গে বাস্তবতার মিলও পেয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে কোন পরিবহনে উঠবেন, কত ভাড়া হলে ঠকে যাবেন না, শিমরাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে এসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ সেরে নিচ্ছিলেন তাঁরা।

করোনা ঝুঁকি সত্ত্বেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইয়াসমিন বলেন, ‘মরি–বাঁচি, বাবা-মা ছাড়া ঈদ করমু না।’ জেসমিন বলেন, ‘করোনা তো এমনিই বিপদে ফেলছে। লকডাউন দিছে, খাবার কি দিছে? খাই না–খাই, নিজের বিপদ নিজেই সামলাইছি। এহন কিছু হইলেও ওই বিপদ আমাগোরোই সামলাইতে হইব। বাপ-মা ছাড়া ঈদ করমু না।’ পরে ‘পথে ঝামেলা হলে নেমে যেতে হবে’ শর্তে জনপ্রতি ৮০০ টাকা ভাড়ায় ফেনীগামী একটি মাইক্রোবাসে চড়ে বসেন দুই বোন।

আজ সকালে ইয়াসমিন-জেসমিনদের মতো শত শত মানুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল, সাইনবোর্ড ও কাঁচপুর মোড় থেকে বাড়ি ফিরেছেন। অন্যান্য দিনের মতো আজ সকালেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দূরপাল্লার বাস চলাচল করেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দু–তিন গুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের।

সকাল সাড়ে সাতটায় সাইনবোর্ড মোড় এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় তিনটি বাস যাত্রী নিয়ে কুমিল্লার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এসব বাসে গৌরীপুর পর্যন্ত যেতে ১৫০ টাকা করে ভাড়া গুনছেন যাত্রীরা। একই সময়ে জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়ায় ভৈরবের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে আরও দুটি বাস। প্রতিদিনের মতো সাইনবোর্ড ট্রাফিক পুলিশ বক্সের আশপাশের এলাকা থেকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উদ্দেশে ভাড়া করা মাইক্রোবাসগুলো ছেড়ে গেছে। এসব মাইক্রোবাসে এলাকাভেদে জনপ্রতি ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা ভাড়া গুণছেন যাত্রীরা।

তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ সাইনবোর্ড মোড় এলাকায় ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভিড় কম ছিল। আজ সকালে সাইনবোর্ড মোড়ে দুজন পুলিশকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে।

তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত শিমরাইল মোড় এলাকায় যাত্রী ও পরিবহনের চাপ বেশি দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীরা বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাসে করে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। পরিবহন–সংকট ও ভাড়া বাঁচাতে অনেককেই ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে চড়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত শিমরাইল মোড় থেকে রয়েল কোচ, গজারিয়া পরিবহন, আঁচল পরিবহন, প্রিন্স পরিবহনসহ অন্তত ১৬টি পরিবহনকে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। এ সময় শিমরাইলে পুলিশের কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। তবে সকাল ১০টায় কাঁচপুর হাইওয়ে থানার একটি টহল দলকে কাঁচপুর সেতুর পূর্বপাশে টহল দিতে দেখা গেছে। এ সময় কাঁচপুরে কোনো দূরপাল্লার পরিবহনকে যাত্রী নিতে দেখা যায়নি। তবে সাইনবোর্ড ও শিমরাইল থেকে ছেড়ে আসা পরিবহনগুলো বিনা বাধায় কাঁচপুর অতিক্রম করেছে।

নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও চলছে দূরপাল্লার বাস। যাত্রীরা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। সোমবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
দিনার মাহমুদ

বেশি ভাড়া ও ভোগান্তি নিয়ে যাত্রীদের কেউ কেউ অসন্তোষ প্রকাশ করলেও অধিকাংশ যাত্রীই ভোগান্তি ও বেশি ভাড়ার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, যে উপায়েই হোক ঈদের আগে বাড়ি যেতে পেরে তাঁরা খুশি।

মাহনাজ করিম নামের এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদে বাড়ি ফিরব আর ভোগান্তি পোহাব না, সেটা তো হয় না। লকডাউনে বাড়ি যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিবহন–সংকটসহ বেশি ভাড়ার বিষয়টি জেনেছি। ভোগান্তি আর বেশি ভাড়ার বিষয়টি মাথায় নিয়েই ঘর থেকে বের হয়েছি।’

তবে এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে রঞ্জিত গোপ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে ভৈরবে যেতে হবে। অন্যান্য সময় দেড়গুণ ভাড়ায় দুই সিটে একজন করে আসা–যাওয়া করেছি। এখন তিন গুণ ভাড়ায় দুই সিটে তিনজন যাই।’