মসলিনের জেলায় তৈরি পোশাকশিল্পের রাজত্ব

ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর পোশাক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা।ছবি: প্রথম আলো

হাজার বছর ধরে শিল্পপণ্যের জন্য জগৎজোড়া খ্যাতি নারায়ণগঞ্জের। ঐতিহ্যের পথ ধরেই মসলিন ও পাটের পর শত বছর আগে নারায়ণগঞ্জে গড়ে ওঠে বাংলা অঞ্চলের প্রথম হোসিয়ারি। হোসিয়ারি শিল্পের বিস্তারের ফলেই পাট আর মসলিনের জেলায় আজ তৈরি পোশাকশিল্পের রাজত্ব। তবে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা নিটওয়্যার শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখলেও পুরো নগরব্যবস্থাকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।

১৯২১ সালে মাত্র চারটি হ্যান্ড রিবন মেশিন নিয়ে সতীশ চন্দ্র পাল নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে গড়ে তোলেন দেশের প্রথম হোসিয়ারি কারখানা। আদমশুমারি অনুযায়ী, সে সময় শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩১ হাজার। শত বছর পর সে হোসিয়ারি শিল্পের বিস্তৃত রূপ নিটওয়্যার শিল্প নারায়ণগঞ্জ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশে। নিটওয়্যার ও ওভেন (শার্ট, প্যান্ট) মিলে নারায়ণগঞ্জে গড়ে ওঠা তৈরি পোশাকশিল্পে বর্তমানে প্রায় আট লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। ৬৮৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নারায়ণগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ লাখে।

মসলিন ও পাটের পথ ধরে তৈরি পোশাকশিল্প

কথিত আছে, মিসরের ফারাওদের মমিতে নারায়ণগঞ্জে তৈরি মসলিন ব্যবহৃত হতো। কালের বিবর্তনে শীতলক্ষ্যার তীরের সেই মসলিন হারিয়েছে। একসময়ের প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের পাটশিল্পও এখন ধ্বংসের মুখে। তবে বিশ্ববাজার থেকে হারিয়ে যায়নি নারায়ণগঞ্জের নাম। দাপটের সঙ্গেই সে নাম ধরে রেখেছে তৈরি পোশাকশিল্প। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারির আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু হওয়া নিটওয়্যার শিল্প একাই বছরে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। যার অর্ধেকের বেশি জোগান দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ।

বিকেএমইএর সহসভাপতি মো. হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, নিটওয়্যার শিল্পের যাত্রা শুরু নারায়ণগঞ্জে। এই জেলাতেই নিট শিল্পের অর্ধেকের বেশি কারখানা। নিটওয়্যার (টি-শার্ট, সোয়েটার) ও ওভেন মিলে নারায়ণগঞ্জে অন্তত সাড়ে ছয় শ তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। এসব কারাখানা বছরে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করছে।

শুরুর কথা

১৯২১ সালে নারায়ণগঞ্জে হোসিয়ারি শিল্পের যাত্রা শুরু হলেও পাবনা অঞ্চলের হোসিয়ারি শিল্প বিখ্যাত ছিল তারও আগে থেকে। তবে শীতলক্ষ্যাপারে হোসিয়ারির গোড়া পত্তনের পর থেকে পাবনার তুলনায় নারায়ণগঞ্জে দ্রুত হোসিয়ারি শিল্প বিকশিত হতে থাকে। ১৯৬০ সাল থেকে মিনার টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারী জারজিস হোসেন বিদেশে হোসিয়ারি পণ্য রপ্তানির চেষ্টা করতে থাকেন। ১৯৬৭ সালে নিট শিল্পের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লিবিয়ায় টি-শার্ট রপ্তানি করেন জারজিস হোসেনের প্রতিষ্ঠান হোমেক্স পাকিস্তান লিমিটেড। বাবার হাত ধরে দেশের প্রথম তৈরি পোশাক রপ্তানির স্মৃতি এখনো মনে করতে পারেন জারজিস হোসেনের ছেলে বিকেএমইএর পরিচালক মঞ্জুরুল হক। প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানির কাগজ তৈরি করতে গিয়ে মিনার টেক্সের নাম খাতাকলমে হোমেক্স পাকিস্তান লিমিটেড করা হয়েছিল। প্রথমবার প্রায় পাঁচ হাজার সাদা টি-শার্ট রপ্তানি হয়েছিল। বলা চলে, এর মধ্য দিয়েই নিট শিল্পের বিদেশ যাত্রা শুরু।

মঞ্জুরুল হক জানান, তারপর থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগে পর্যন্ত আমেরিকার প্রতিষ্ঠান স্টাইল ম্যানসের কাছে প্রায় পাঁচ লাখ টি-শার্ট রপ্তানি করেন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। এ সময় জারজিস হোসেনের সহায়তায় তাঁর তিন বন্ধু মসলিন হোসিয়ারির আবদুল মজিদ, শান হোসিয়ারির আবু তালেব ও আবেদ আলীর মনোয়ারা টেক্সটাইল স্টাইল ম্যানসের জন্য টি-শার্ট তৈরি শুরু করে।

মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৯ সালে মঞ্জুরুল হকের হাত ধরেই স্বাধীন বাংলাদেশ আবার নিট পণ্য রপ্তানি শুরু করে। শুরুর সেই গল্প জানান মঞ্জুরুল। ‘মুক্তিযুদ্ধের পর হোসিয়ারি শিল্পের অবস্থা তখন নিবু নিবু। ১৯৭৮ সালে বাবা নির্দেশ দেন বিদেশি ক্রেতা খুঁজতে। বিদেশি ক্রেতা পেতে হলে বিদেশি নাগরিকদের আনাগোনা আছে এমন জায়গা চাই। ভেবেচিন্তে একদিন এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলাম পূর্বাণী হোটেল ও সোনারগাঁও হোটেলে। হোটেলের লাউঞ্জে বসে নিজেরাই ক্রেতা–বিক্রেতা সেজে জোরে জোরে কথা বলি আর টি-শার্ট নেড়েচেড়ে দেখি। যদি কোনো বিদেশি ক্রেতা তা দেখে এগিয়ে আসেন, এই আশায়। এমনিভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর একদিন ফ্রান্সের এক নাগরিক আমাদের টি-শার্ট নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। শুরুতেই তিনি পাঁচ লাখ টি-শার্ট চান আমাদের কাছে। ছোট কারখানায় এত টি-শার্ট কীভাবে তৈরি করব, তা ভাবতে ভাবতেই নারায়ণগঞ্জে এসে বাবাকে জানাই। বাবা তাঁর বন্ধুদের ডেকে আবারও পুরোনো হোসিয়ারিতেই টি-শার্ট বানানো শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে ফ্রান্স দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের রপ্তানি শুরু। এ সময় থেকে কারখানার পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা অনুযায়ী তৈরি পোশাকশিল্পে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগতে থাকে বলেও জানান তিনি।

হোসিয়ারি কারখানায় সুতা থেকে থানকাপড় বুননের যন্ত্রকে বডি মেশিন বলা হতো। শুরুতে বডি মেশিনে উৎপাদিত কাপড়ের তৈরি টি-শার্ট বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়। জারজিস হোসেনের দেখানো পথে পরবর্তী সময়ে কনক হোসিয়ারি, নেভি হোসিয়ারিসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান নিটপণ্য রপ্তানি শুরু করে। নারায়ণগঞ্জে বিকশিত হতে থাকে রপ্তানিমুখী নিটওয়্যার শিল্প। পুরোনো বডি মেশিনগুলোর জায়গায় স্থান করে নেয় জাপান, তাইওয়ান, জার্মানি থেকে আমদানি করা আধুনিক সব যন্ত্র। পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুরে ছড়িয়ে যাওয়া নিটশিল্প বর্তমানে দেশের মোট জাতীয় রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪২ ভাগ জোগান দিচ্ছে।

ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর পোশাক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা।
ছবি: প্রথম আলো

স্বাধীন বাংলাদেশে তৈরি পোশাক (ওভেন) শিল্প

যাত্রা শুরু করলে শীতলক্ষ্যা তীরের নারায়ণগঞ্জেও তার ঢেউ এসে লাগে। সত্তরের দশকের শেষে এস এ খায়ের শহরের মাসদাইরে গড়ে তোলেন রপ্তানিমুখী ফোর ব্রাদার্স লিমিটেড নামের একটি কারখানা। শুরুতে প্রায় শতাধিক নারী শ্রমিক কাজ করতেন কারখানাটিতে। একই সময়ে শহরের আশপাশের এলাকাগুলোতে গড়ে ওঠে সোনারগাঁ গার্মেন্টস, মারিয়া গার্মেন্টস. ক্যাপিটেল গার্মেন্টস। ওভেন দিয়ে স্বাধীনতার পর নারায়ণগঞ্জে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের যাত্রা শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত নিট শিল্পই রাজত্ব গড়ে তুলেছে শীতলক্ষ্যাপারের শহরে।

এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর স্বচ্ছ পানিতে হোসিয়ারি কাপড়ের ধোলাই ভালো হতো। এ ছাড়া শ্রমিক ও সুতার সহজলভ্যতা, পরিবহনসুবিধাসহ নানান কারণে নারায়ণগঞ্জে হোসিয়ারি শিল্পের বিকাশ ঘটে। পরবর্তী সময়ে এই হোসিয়ারি শিল্পের শ্রমিকেরাই নিটওয়্যার শিল্পের কারিগর হিসেবে কাজ শুরু করেন। এ ছাড়া নিট পণ্যের ডাইংয়ের জন্য শীতলক্ষ্যার পানি ছিল উৎকৃষ্ট। একদিকে হোসিয়ারি থেকে পাওয়া সুবিধা, অপর দিকে ডাইংয়ের জন্য শীতলক্ষ্যার উৎকৃষ্ট পানি। দুইয়ে মিলে নারায়ণগঞ্জে দ্রুতই বিকশিত হতে থাকে নিটওয়্যার শিল্পের। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের তৈরি পোশাকশিল্পের ৯৫ ভাগই নিটওয়্যার কারখানা।

আছে নানাবিধ সংকট

দেশের অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও ভালো নেই নারায়ণগঞ্জের তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে প্রতিনিয়তই ক্রয়াদেশ হারানোর অনিশ্চয়তায় আছেন তাঁরা। অপরদিকে বিশ্ববাজারে সুতার দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এ সময় ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য অনেক কারখানাই ক্ষতি মেনে নিয়ে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তাঁরা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে নিটওয়্যারের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র বিসিক শিল্পনগরীর ভগ্নদশা, জলাবদ্ধতা, গ্যাস–সংকটসহ শিল্পসহায়ক অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া আছে নানান অজুহাতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি।

অপরদিকে করোনাকালে চাকরি হারানো ছাড়াও শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মতো দীর্ঘমেয়াদি সংকটে ভুগছেন নারায়ণগঞ্জের তৈরি পোশাকশ্রমিকেরা। ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জে আবাসিক এলাকাগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য যত্রতত্র গড়ে উঠেছে বসতি। ঘিঞ্জি এলাকায় নাগরিক সুযোগ–সুবিধা ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে শ্রমিকেরা বসবাস করছেন। সরকার ও শিল্পমালিকদের পরিকল্পনাহীনতার ফলে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা এক অমানবিক জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে মনে করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জে বিক্ষিপ্তভাবে পোশাক কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে। কারখানা গড়ে তোলার সময় শ্রমিকদের বাসস্থান ও তাঁদের সুযোগ–সুবিধার কথা মাথায় রাখা হয়নি। ফলে কারখানার আশপাশের এলাকাগুলোতে গড়ে ওঠা ঘিঞ্জি পরিবেশে বছরের পর বছর ধরে শ্রমিকেরা কোনো রকমে টিকে আছেন। পরিকল্পনাহীনতার ফলে শ্রমিক পরিবারগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদনসহ সব ধরনের নাগরিক সুবধি থেকে বঞ্চিত। পরিকল্পনাহীনতার ফলাফল হিসেবে পুরো ডিএনডি প্রকল্প ধ্বংস হয়েছে উল্লেখ করে এই শ্রমিকনেতা বলেন, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের লাখো শ্রমিক জলাবদ্ধ ডিএনডি এলাকায় বসবাস করেন। প্রতিদিন হাজারো শ্রমিককে ডিএনডির নোংরা পানি মাড়িয়েই ভেজা শরীরে কারখানায় আসতে হচ্ছে।

অপরিকল্পিত শিল্পায়নে ধুঁকছে নারায়ণগঞ্জ

তৈরি পোশাকশিল্পের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের শহর ও শহরতলিতে গড়ে উঠেছে চাকচিক্যময় বহুতল ভবন ও কারখানা। অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারণে যত্রতত্র বাসস্থান তৈরি হয়েছে শ্রমিকদের জন্য। হারিয়ে গেছে শিশুদের খেলার মাঠ, ভরাট হয়েছে জলাশয়। যে শীতলক্ষ্যা নদীর জন্য নিটওয়্যার শিল্পের বিকাশ, সে শীতলক্ষ্যাই এখন দেশের সবচেয়ে দূষিত নদীগুলোর একটি। পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, শীতলক্ষ্যার পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্য দশমিক ৫ মিলিগ্রাম। ফলে জলজ প্রাণিশূন্য হয়েছে শীতলক্ষ্যা। শীতলক্ষ্যা ছাড়াও জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী এমনকি মেঘনা নদীও দূষণের কবলে পড়েছে।

নদীদূষণের প্রধানতম কারণ হিসেবে নিটওয়্যার শিল্পের ডাইং কারখানাকে দায়ী করেন পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন। প্রথম আলোকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রায় ৬০০ নিটওয়্যার কারখানা এবং তাদের সহায়ক হিসেবে ছোট–বড় অন্তত ৪৫০টি ডাইং কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ইটিপি রয়েছে রপ্তানিমুখী ৩১২টি কারখানার। ডাইং কারখানার অপরিশোধিত পানি সরাসরি খাল, পুকুর ও নদীতে গিয়ে মিশছে, ফসলি জমিতে পড়ছে। ফলে ভয়াবহ এক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি নদীকে কেন্দ্র করে অন্তত ২৭টি বড় খাল কাগজে–কলমে রয়েছে। অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে এসব খালের অধিকাংশই ভরাট ও দখল হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের বাতাস বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জেনারেটর ও যন্ত্রের সঙ্গে যানবাহনের হর্ন মরাত্মক শব্দ দূষণ করছে।

সবাই চান পরিকল্পিত শিল্পায়ন

শ্রমিকদের নিরাপত্তা, শিল্পের বিকাশ ও নারায়ণগঞ্জ নগরকে বাসযোগ্য করতে এখনই সুপরিকল্পিত নগরায়ণ চান ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও নাগরিক প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, এখনই পরিকল্পনামাফিক নগরায়ণ না করা গেলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে নারায়ণগঞ্জ। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীনতা ও উদাসীনতার ফলে নারায়ণগঞ্জ বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পের বিকাশ কিংবা শিল্পসহায়ক অবকাঠামো নির্মাণে কোনো সরকারই তেমন ভূমিকা রাখেনি। ফলে শুরু থেকেই অপরিকল্পিতভাবে এই শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। সংকট থেকে বের হতে শিল্পঘন অঞ্চলগুলোতে শ্রমিকদের জন্য পরিকল্পিত বাসস্থান তৈরির পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রতি তাগিদ দেন তিনি।

তৈরি পোশাকশিল্পসহ পুরো নারায়ণগঞ্জকে পরিকল্পনামাফিক সাজানো না গেলে নারায়ণগঞ্জ বসবাসের যোগ্যতা হারাবে বলে মনে করেন বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানা প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক। তিনি বলেন, ডাইং কারখানাগুলোর জন্য আলাদা অঞ্চল তৈরি করে সেগুলোকে একসঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। সমন্বিত ইটিপির মাধ্যমে সেসব ডাইং কারখানার বর্জ্য পরিশোধন করা গেলে নদীদূষণ কমে আসবে। এ ছাড়া যত্রতত্র বসতি স্থাপন বন্ধে আদমজী পাটকলের মতো করে শ্রমঘন অঞ্চলগুলোতে শ্রমিকদের জন্য কলোনি স্থাপন, আবাসিক এলাকায় থাকা কারখানাগুলোকে পরিকল্পনামাফিক সরিয়ে নেওয়া, নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

ফজলুল হক বলেন, শুধু শহরবাসীর জন্যই নয়, তৈরি পোশাকশিল্পকে এগিয়ে নিতে হলেও পুরো নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে তৈরি পোশাকশিল্পকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সরকারের পাশে থাকবেন বলে জানান বিকেএমইএর সহসভাপতি মো. হাতেম।