মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে ৯টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ

মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে হবিগঞ্জের ৯টি রুটে আজ সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এ কারণে আজ সকালে হবিগঞ্জ পৌর টার্মিনাল থেকে একটি বাসও গন্তব্যে ছেড়ে যায়নিপ্রথম আলো

হবিগঞ্জ-সিলেটসহ নয়টি রুটে আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছে হবিগঞ্জ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশা চলাচল বন্ধের দাবিতে তাদের এ ধর্মঘট। আজ সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ অঞ্চলের সাধারণ যাত্রীরা। সমিতি বলছে, দাবি পূরণ না হলে আগামীকাল বুধবার থেকে ঢাকা-হবিগঞ্জ রুটেও বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।

হবিগঞ্জ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আইন অনুযায়ী সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু অবাধে এ মহাসড়কে অটোরিকশাগুলো চলাচল করে আসছে। মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধসহ সব ধরনের অবৈধ পরিবহন বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় ১৩ অক্টোবর সমিতির পক্ষ থেকে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধসহ জেলার সব ধরনের অবৈধ পরিবহন বন্ধের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি ১৮ অক্টোবরের মধ্যে এ দাবি পূরণ না হলে সমিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডাকার বিষয়টি উল্লেখ করে।

১৩ অক্টোবর হবিগঞ্জ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধসহ জেলার সব ধরনের অবৈধ পরিবহন বন্ধের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি ১৮ অক্টোবরের মধ্যে এ দাবি পূরণ না হলে সমিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডাকার বিষয়টি উল্লেখ করে।

সমিতি জানায়, স্মারকলিপি দেওয়ার পর প্রশাসন থেকে এ সময়সীমার ভেতরে কোনো সমাধান না পাওয়ায় আজ সকাল ছয়টা থেকে জেলার নয়টি রুটে একযোগে সব বাস চলাচল বন্ধে করে দেয় জেলা বাস-মিনিবাস মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। এই রুটগুলো হলো হবিগঞ্জ-সিলেট, হবিগঞ্জ-সিলেট বাইপাস, হবিগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ-মাধবপুর, হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ-লাখাই, হবিগঞ্জ-বানিয়াচং, হবিগঞ্জ-আউশকান্দি ও হবিগঞ্জ-চুনারুঘাট।

সরেজমিনে আজ দুপুরে হবিগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনালে দেখা যায়, স্থানীয় নয়টি রুটে চলাচলকারী সব বাস সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। কোনো বাস গন্তব্য ছেড়ে যায়নি। সকাল ছয়টা থেকে এ বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এ সময় কথা হয় সিলেটগামী যাত্রী মামুনুর রশীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি সিলেট যেতে পারেননি। শুধু তিনিই নন, তাঁর মতো শত শত মানুষ বাসস্ট্যান্ডে এসে ফেরত গেছেন।

আমরা এ ধর্মঘট ডাকার আগে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়ে অবহিত করেছি। কিন্তু তারা একটি অবৈধ পরিবহনও বন্ধ করেনি। যে কারণে আমরা বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলেট-হবিগঞ্জসহ নয়টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। বুধবার থেকে হবিগঞ্জ-ঢাকা রুটেও সব বাস বন্ধ করে দেওয়া হবে।
শঙ্খ শুভ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক, হবিগঞ্জ জেলা বাস মালিক সমিতি

অপর যাত্রী সজল রায় বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ বাস মালিক-শ্রমিকদের এ ধর্মঘটের কথা জানি না। বাসস্ট্যান্ডে এসে ভোগান্তিতে পড়েছি। চিকিৎসার জন্য আজ সিলেট যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে পারিনি।’ এই যাত্রীর প্রত্যাশা, আলোচনা করে সমস্যার সমাধান হোক।

জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ ধর্মঘট ডাকার আগে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়ে অবহিত করেছি। কিন্তু তারা একটি অবৈধ পরিবহনও বন্ধ করেনি। মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধের আইন থাকলেও হবিগঞ্জে এ আইন প্রয়োগ হয় না। যে কারণে আমরা বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলেট-হবিগঞ্জসহ নয়টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। বুধবার থেকে হবিগঞ্জ-ঢাকা রুটেও সব বাস বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া আমাদের এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে জেলার সব ট্রাক-মিনি ট্রাক মালিক-শ্রমিকেরাও তাঁদের পরিবহনগুলো বন্ধ রাখবেন।’

জানতে চাইলে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে মোহাম্মদ কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ বিকেলে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে প্রশাসন বসবে। আশা করি, বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারব আমরা।’