মহেশখালীর বালুচরে শুঁটকি তৈরির ধুম

মহেশখালীর সাইরার ডেইল এলাকায় চরে শুকানো হচ্ছে শুঁটকি। গত বৃহস্পতিবার  দুপুরে।  প্রথম আলো
মহেশখালীর সাইরার ডেইল এলাকায় চরে শুকানো হচ্ছে শুঁটকি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে। প্রথম আলো

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিমে সাইরার ডেইল এলাকার বালুচরে শুঁটকি উৎপাদনের ধুম পড়েছে। দুই মাস ধরে এখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মাছ শুকাচ্ছেন। সমুদ্রপাড়ের প্রায় চার কিলোমিটার বালুচরে অন্তত ১০০টি শুঁটকি মহলে উৎপাদন হচ্ছে শুঁটকি। মহালগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা শুঁটকি সরবরাহ করছেন কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের নানা অঞ্চলে। 

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সাইরার ডেইল গিয়ে দেখা যায়, বিস্তৃত বালুচরে গড়ে উঠেছে সারি সারি শুঁটকি মহাল। মহালের শ্রমিকেরা বাঁশের মাচা বানিয়ে তাতে রুপচাঁদা, লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি, ফাইস্যা, লাক্ষাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রাখছেন শুকানোর জন্য। কোথাও বাঁশের খুঁটিতে মাছ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে শুকানোর জন্য। শুকনো মাছ বাছাই করে এক পাশে রাখছেন কিছু শ্রমিক। আশপাশের সব শুঁটকি মহালেই শ্রমিকদের ব্যস্ততার এই চিত্র দেখা গেল। 

শুঁটকি মহালের শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, এখনকার রুপচাঁদা, ছুরি ও লইট্টা শুঁটকির কদর সারা দেশে। রুপচাঁদা প্রতি কেজি দেড় থেকে আড়াই হাজার, ছুরি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০, লইট্টা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

সাইরার ডেইল এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, এখানকার বালুচর শুঁটকির চর হিসেবে এলাকার সবার পরিচিত। আর শীত মৌসুমকে ঘিরে বালুর চরে শুঁটকি তৈরির হিড়িক পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নভেম্বর থেকে শুরু করে এপ্রিল মাস পর্যন্ত শুঁটকি তৈরি করেন মহালে। 

সাইরার ডেইল এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী আবুল কাসেম ও নুরুল আবছার বলেন, শীত মৌসুমকে সামনে রেখে বালুচরের শুঁটকি মহালে শুঁটকি মাছ তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সাগরে মাছের সংকট বেশি। এ কারণে মাছের দাম বেড়ে গেছে। এতে শুঁটকির জন্য মাছ জোগাড় করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বাদশাহ জানান, এখানকার শুঁটকিতে কোনো প্রকার বিষ মেশানো হয় না। এ কারণে এই চরে উৎপাদিত শুঁটকির চাহিদা রয়েছে অনেক বেশি। 

স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, উন্নতমানের শুঁটকি উৎপাদন করার লক্ষ্যে পরিষদের পক্ষ থেকে স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ডিজিটাল আইল্যান্ড সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই এলাকার ব্যবসায়ীরা বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন করছে। এতে বিষমুক্ত শুঁটকি মাছ বিক্রি করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে। ফলে দাম পেয়ে খুশি এই এলাকার অন্তত এক শ শুঁটকি ব্যবসায়ী। 

মাতারবাড়ী ইউনিয়নের শুঁটকি ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন বলেন, দুই মাস ধরে জমজমাট বেচাকেনা চলছে। কারণ স্থানীয় বাসিন্দাদের শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত চাকরিজীবীরা বাড়িতে যাওয়ার পথে এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি নিয়ে যান। এ কারণে বেচাকেনাও আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। 

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জামিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারেও শীত মৌসুমকে সামনে রেখে সাইরার ডেইল বালুচরে শুঁটকি তৈরির ধুম পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি বাইরের লোকজনও এখন মহেশখালী বেড়াতে এসে শুঁটকি কিনছেন। এখানকার শুঁটকির চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন।